রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বড় বোঝা’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
একইসঙ্গে ভারত এ সমস্যা সমাধানে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাক্ষাৎকারটি রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে লক্ষাধিক রোহিঙ্গার উপস্থিতি তার শাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে এএনআইয়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় স্বীকার করেছেন হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আচ্ছা আপনি জানেন... আমাদের জন্য এটি একটি বড় বোঝা। ভারত একটি বিশাল দেশ; তারা রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হলেও সেখানে খুব বেশি শরণার্থী নেই। কিন্তু আমাদের দেশে... আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। তাই... আমরা আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করছি, যে তাদেরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে তারা দেশে ফিরে যেতে পারে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার মানবিক দিকটি মাথায় রেখে বাস্তুচ্যুত এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের ভালো রাখার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলছেন, ‘হ্যাঁ... মানবিক কারণে আমরা এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি এবং সব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। এমনকি এই কোভিডের সময়, আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সবাইকে টিকা দিয়েছি। কিন্তু তারা কতদিন এখানে থাকবে? তাই তারা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। আমাদের পরিবেশ বিপজ্জনক। তার ওপর সেখানে কিছু লোক মাদক পাচার বা নারী পাচারের বা অস্ত্র সংঘাতের সঙ্গে জড়িত। দিনকে দিন তা বেড়েই চলেছে। তাই যত তাড়াতাড়ি তারা দেশে ফিরতে পারে, তা আমাদের দেশের জন্য এবং মিয়ানমারের জন্যও মঙ্গলজনক। তাই আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা তাদের সঙ্গে এবং আসিয়ান বা ইউএনও-সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গেও আলোচনা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘তবে এখন তাদের (রোহিঙ্গাদের) দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত এই কাজে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি মনে করি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) থেকে চারদিনের ভারত সফর শুরু করতে যাচ্ছেন। সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে নদীর পানি বণ্টনে বিশেষ করে তিস্তা নদীর ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে তার দেশের সহযোগিতার বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, চ্যালেঞ্জ থাকলেও সেগুলো এমন কিছু নয় যা পারস্পরিকভাবে সমাধান করা যায় না।
তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, আমরা একটি... আপনি জানেন... এটি ঝুলে আছে। (আমাদের এখানে) ভারত থেকে পানি আসে, তাই ভারতের আরও উদারতা দেখাতে হবে। কারণ এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। কখনও কখনও পানির অভাবে আমাদের জনগণও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তায় (পানি না পেয়ে) আমরা ফসল রোপণ করতে পারিনি এবং আরও অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই আমি মনে করি এর সমাধান হওয়া উচিত। অবশ্য, হ্যাঁ আমরা দেখেছি- প্রধানমন্ত্রী (মোদি) ...আপনি জানেন... এই সমস্যাটি সমাধান করার জন্য অনেক আগ্রহী, কিন্তু সমস্যাটি আপনার দেশেই। তাই... আমরা আশা করি এটি (সমাধান) হবে, আপনি জানেন... এটি সমাধান করা উচিত।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, দুই দেশ গঙ্গা নদীর পানি ভাগ করে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুধু গঙ্গার পানিই আমরা ভাগাভাগি করেছি। এই পানির বিষয়ে আমরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু আমাদের আরও ৫৪টি নদী আছে। হ্যাঁ... এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, তাই এটি সমাধান করা উচিত।’