ঢাকা: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জল, স্থল, আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এই বাহিনীর সদস্যদের সততার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন এবং চেইন অব কমান্ড মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি- তৎকালীন বিডিআর) ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আহ্বানে সারা দিয়ে বিজিবি তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান হানারদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন গণহত্যা শুরু করে পিলখানা, পুলিশ হেড কোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিলখানা তখনকার ইপিআর হেডকোয়ার্টার এখানে যেমন আক্রমণ চালায় একই সঙ্গে তারা আক্রমণ চালায় ৩২ নম্বর বাড়িতে। ২৫ মার্চ যখনই হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে। তখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র বাংলাদেশে প্রচার করেছিলেন এই ইপিআর পিলখানা থেকেই। এখানকারই কর্তব্যরত সুবেদার মেজর সওকত আলীসহ তার সঙ্গী আরও চার জন তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাতির পিতার সেই বার্তা সারা দেশে ওয়ারলেসের মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে সুবেদার মেজর সওকত আলীসহ তার সঙ্গীরা ধরা পড়েন। নির্মমভাবে অত্যাচার করে তারা তাদের হত্যা করেছিল। বিজবির প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। তার মধ্যে দুজন বীরশ্রেষ্ঠ, আট জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক পদকে ভূষিত হন। এ বাহিনীর ৮১৭ জন সদস্য মক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন।
একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার মাত্র ৫২ দিনের মাথায়। এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক সেটাই জাতির কাম্য।
বিজিবির আধুনিকায়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ, নারী-শিশু পাচার রোধ, সীমান্ত এলাকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব। সীমান্ত রক্ষাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দান, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ দেশগঠনমূলক বিভিন্ন কাজে আপনাদের ভূমিকা ও পেশাদারিত্ব আজ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। এই বাহিনীকে পুনর্গঠন করে একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ভারত ও মায়ানমার সীমান্তে ইতোমধ্যে ৪টি ব্যাটালিয়ন ৬২টি বিওপি সৃজনের মাধ্যমে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের ৪০২ কিলোমিটার সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই অবশিষ্ট অরক্ষিত সীমান্তকে নজরদারির আওতায় আনা হবে। ৩টি হেলিকপ্টার এবং ৩০টি যানবাহনের সমন্বয়ে বিজিবির স্বতন্ত্র এয়ার উইং গঠন করা হয়েছে। ফলে বিজিবি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে সমানভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিকাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিফোন সুবিধা সম্প্রসারণের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে আইপি টেলিফোনের মাধ্যমে দুর্গম এলাকার যোগাযোগ সহজতর হবে। বাংলাদেশ-ভারত পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনে ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ১ম পর্বে পার্বত্য সীমান্ত এলাকায় ৩১৭ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেশপ্রেম, সততা, শৃঙ্খলা নিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। একটি কথা মনে রাখবেন- শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড, শৃঙ্খলা বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবির সক্ষমতার প্রশংসা করে বলেন, আমাদের সীমান্ত পরিস্থিতি আরও শান্ত রাখা এবং সহনশীল রাখার জন্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে ভূমিকা পালন করছেন সে জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। বডার গার্ড বাংলাদেশ একটি দক্ষ, শক্তিশালী আধুনিক ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষ ই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন এটাই আমি চাই।