ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সম্পত্তির জন্য স্ত্রী-ছেলের নির্যাতনে প্রবাসফেরত কফিল উদ্দিন বাড়িছাড়া

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৫ জানুয়ারী ২০২২ ০৩:৫৪:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সব থেকেও এখন অসহায় প্রবাসফেরত কফিল উদ্দিন। স্ত্রী-সন্তানের অত্যাচারে বাড়িছাড়া, বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ফিরে এখন ক্লান্ত; ঘুরছেন পথে পথে। দীর্ঘ ২৬ বছরের প্রবাস জীবনে কষ্টার্জিত অর্থে গড়া চার-চারটি বাড়ি, বাজারে একটি দোকান এবং প্রায় পাঁচ একর জমি প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নি:স্বাবস্থায় পথে নামিয়ে দিয়েছেন স্ত্রী-সন্তানেরা। শেষতক সংবাদ সম্মেলন ডেকে সম্পত্তির জন্য নিজের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও ছেলে সাইফুল ইসলামের করা শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের কথা উপস্থাপন করেন প্রবাসফেরত কফিল উদ্দিন।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা, প্রবাসফেরত কফিল উদ্দিন সম্পত্তির জন্য নিজের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও ছেলে সাইফুল ইসলামের করা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে ন্যায় বিচার দাবী করেন।

 

 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কফিল উদ্দিন বলেন, ১৯৮৯ সালে আমার বড় ভাই আব্দুল মজিদ চারটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তানকে রেখে মারা যায়। ভাইয়ের নাবলক সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ১৯৯২ সালে তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে আমি বিয়ে করে ভাইয়ের সন্তানদের দায় নিয়ে আদর-স্নেহে প্রতিপালন করতে থাকি। এরই মাঝে আমারও এক ছেলে সন্তান হয়। পরবর্তীতে আমার ভাইয়ের চার ছেলেকেই নিজের টাকায় বিদেশে পাঠিয়েছি। দীর্ঘ ২৬ বছর কুয়েতে প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত ২০১৯ সালে দেশে চলে আসি। প্রবাসে থাকাবস্থায় প্রতিবারই ছুটিতে দেশে এসে জয়গা-জমি কিনেছি। দীর্ঘ ২৬ বছরের প্রবাস জীবনের কষ্টার্জিত অর্থে এলাকায় চারটি বাড়ি, স্থানীয় দারিয়ারচর বাজারে একটি দোকান এবং ১৭ কানি জমি কিনেছি। আমি দেশে একেবারে চলে আসার আগেরবার ছুটিতে এসে একটি জমি কেনার জন্য স্ত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা রেখে যাই। একেবারে দেশে চলে আসার পর আমার নিজের ছেলে সাইফুল ইসলাম ব্যবসার জন্য টাকা দিতে বললে তাকে ১২ লাখ টাকা ব্যায়ে স্থানীয় বাজারে একটি কাপড়ের দোকান করে দেই। তখন আমার স্ত্রীর কাছে জমি কেনার জন্য রেখে যাওয়া ১০ লাখ টাকার হিসাব চাইলে হিসাব না দিয়ে উল্টো তাকে এবং আমার ছেলে সাইফুলের নামে জায়গা-সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। তারা সকল সম্পত্তির দলিল নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয়। আমি দলিলপত্র চাইলে তারা আমাকে শারীরিক- মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। বিদেশে থাকা আমার ভাইয়ের চার ছেলের শলাপরামর্শে তারা আমার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি আমার এক ভাগ্নির বাড়িতে আশ্রয় নিলে গত সাড়ে ৫ মাস আগে আমাকে সেখান থেকে জোরপূর্বক ধরে এনে ঘরে আটকে রেখে সস্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য শারীরিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে আমাকে ট্যাংকের সাথে মেশানো ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে আমার টিপসই নিয়ে কিছু সম্পদ তাদের নামে লিখে নেয়। এ বিষয়ে আমি বাঞ্ছারামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। এরপর থেকেই আমি বাড়িছাড়া। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে আমার স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করি। মামলার পর থেকে তারা আমাকে মারার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে। নিজের ঘর-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আমাকে এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমি এসব অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতনের বিচার এবং সারাজীবনের কষ্টার্জিত অর্থে গড়া সম্পত্তিগুলো ফেরত পেতে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

 

 

সাংবাদিক সম্মেলনে কফিল উদ্দিনের আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে তার ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, 'বাবাকে নির্যাতন করে সম্পত্তি লিখে নিইনি। বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদেরকে সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। কখনোই সম্পত্তির জন্য তাকে নির্যাতন করা হয়নি।