ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

১৫ জুলাই গুলি করতে করতে উপাচার্য বাসভবনের দিকে যাচ্ছিলেন শ্যুটার শামীম

আকিব সুলতান অর্নব, জাবি প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৭:০০ অপরাহ্ন | শিক্ষা
১৫ জুলাই দিবাগত রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করতে করতে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যাচ্ছিলেন শামীম মোল্লা। ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে। 
 
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে স্থানীয়দের কাছ থেকে অস্ত্র আনা হয় পিকআপ ভ্যানে করে। একটি শর্টগান আসলে শামীম মোল্লার সেটি পরীক্ষামূলক একটি ফায়ার করে। পরে অস্ত্রটি তারেকের হাতে তুলে দিয়ে বলে 'আজকের আক্রমণে তুই নেতৃত্ব দিবি'- এমনটাই বলেছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি।
এসময় ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মেহেদি ইকবালও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্টের রুমে হামলা নিয়ে মিটিং করেন অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ রঙ্গন ও পলাশ শাহা। পরে হামলার সময় রঙ্গনকে শিক্ষক ক্লাবেও অবস্থান করতে দেখা যায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নিতে গেলে তিনি এক শিক্ষার্থীকে ক্লাব থেকে বের করে দেয়। 
 
পরে বহিরাগত ও জাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে হল থেকে মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরাঙ্গীর মোড় অতিক্রম করলে তারেক ও শামীম মোল্লা ফায়ার করতে করতে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে হাঁটতে থাকে। এসময় আন্দোলনকারীরা আতঙ্কিত হয়ে উপাচার্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে সাথে আনা শতাধিক পেট্রোল বোমা ভিসির বাড়ির ভিতরে শিক্ষার্থীদের উপর নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
 
সাভারে কর্মরত এক সাংবাদিক বলেন, শামীমকে আগে থেকেই চিনতাম। উপাচার্য বাসভবনের সামনে সে আমাকে সালাম দিয়ে 'কেমন আছি' জানতে চায়। সেসময় তারা ভিসির বাড়ির দিকে পেট্রোল বোমা ছুড়ছিলেন।
 
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণের পরে শিক্ষার্থীরা পালটা ধাওয়া দেয়। ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় বটতলায় অবস্থানরত এ শ্যুটার শামীমকে এ খবর জানায় ছাত্রলীগের তিন নেতা মিজান, তারেক এবং রতন বিশ্বাস। খবর শুনে বঙ্গবন্ধু হলে যায় সে। বঙ্গবন্ধু হলে গিয়ে সে ছাত্রলীগের নেতাদের এ অবস্থা দেখে সে এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সবাইকে লোক একত্রিত করার নির্দেশ দেয় পাশাপাশি সে নিজেও বাইরে থেকে অস্ত্র ও লোক নিয়ে আসে। রাত আনুমানিক ১১ টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেরুয়া দিয়ে ১০ পিকআপ বোঝাই কর্মী ও অস্ত্র ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তার নেতৃত্বে। এসময় সেখানে মেহেদী ইকবাল ও তার গাড়িও দেখা যায়। শামীম মোল্লা সকল অস্ত্রের মধ্য থেকে একটি শর্ট গানও বের করে নিয়ে পরীক্ষা করে। অস্ত্র পরীক্ষা করার পর সে তা তারেকের হাতে দিয়ে তাকে আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়ে দেয়। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বটতলা দিয়ে তারা সামনে অগ্রসর হয়। চৌরঙ্গী থেকে সে এবং তারেক গুলি চালাতে চালাতে উপাচার্য বাসভবনের দিকে অগ্রসর করতে থাকে। উপাচার্য বাসভবনে প্রথম দফা আক্রমণের পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও শিক্ষার্থীদের উপর সরাসরি গুলি চালায় এই শ্যুটার শামীম। পরবর্তীতে অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে দলবলসহ পলায়ন করে শামীম।