চিনি, ভোজ্যতেল, চাল ও খেজুর- এ চার পণ্যের শুল্ক কমানো সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
তিনি বলেন, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আসবেন, আমরা আশা করছি তার আগেই চার পণ্যের শুল্ক কমানো সংক্রান্ত অর্ডার (প্রজ্ঞাপন) হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালসহ অন্যান্য কৃষি পণ্যের দাম নিয়ে আমরা বৈঠকে আলোচনা করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চালের বস্তায় মূল্য তালিকা এবং উৎপাদনের তারিখ ও জাত উল্লেখ থাকতে হবে। এ জন্য কোন কোন এলাকায় কোন কোন জাতের ধান উৎপাদন হয়, তার তালিকা ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে চাওয়া হয়েছে।
ভোক্তারা ২০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে স্বস্তি পাবেন কি না এবং প্রধানমন্ত্রীর চার পণ্যের শুল্ক কমানোর নির্দেশের প্রভাব কবে থেকে পড়বে- জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি স্বস্তি শুরু হয়ে গেছে। কারণ আজ বা কালকের মধ্যে প্রজ্ঞাপন পেয়ে যাব। আমি বলতে পারি, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসবেন। তার আগেই আমরা ট্যারিফটা পুনর্নির্ধারণ করতে পারব বলে আশা করছি। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অবগত আছেন। ট্যারিফ কমিশন, আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বসে আমরা যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেব, দ্রুত ইমপ্যাক্ট আপনারা পাবেন।
তিনি বলেন, চারটি পণ্য হলো- ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও চাল। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, চাল যেহেতু আমদানি করতে হয় না, তাই উচ্চ ট্যারিফ না দিয়ে রেখে যদি কেউ মনে করেন কম দামে চাল এনে বাজারে বিপণন করবেন, সেক্ষেত্রে খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। বিষয়টি হলো মুক্ত বাজার করে ভোক্তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, যাতে বাজারে কখনো সরবরাহ ঘাটতি না থাকে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বাজার ব্যবস্থাপনাটাকে ঢেলে সাজাতে চাচ্ছি। ভোক্তা থেকে উৎপাদক পর্যায়ে কোনো স্থানে যেন কারসাজি না হয়। ভোক্তা অধিকার যখন অভিযানে যায়, তখন তাদের কাছে কোনো তথ্য থাকে না, কোন চাল কম উৎপাদন হয়েছে, মেয়াদ কতদিন, দাম কত- এসব। এজন্য আজ বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোন এলাকায় কোন ধান, কোন জাত, কোন মৌসুম- এ তিনটি তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় মিলারদের নির্দেশনা দেবে। ধান ভাঙালে উৎপাদনের বছর ও মিলিংয়ের তারিখ, উৎপাদন মূল্য, পাইকারি মূল্য, খুচরা মূল্য এগুলো বস্তায় উল্লেখ থাকবে। সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমাদের একটি আইন আছে- কৃষি বিপণন আইন ২০১৮। এর অধীনে কৃষি বিপণনের বিধিমালা ২০২১ অনুযায়ী আমাদের উৎপাদিত সব কৃষি পণ্যের এলাকাভিত্তিক যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের দেওয়া হবে। একেক জায়গায় উৎপাদন খরচ ও পরিবহন খরচ একেক রকম হবে। এ তথ্যটা দিলে তখন কারওয়ান বাজারে দাম কত, মানিকগঞ্জে বা চট্টগ্রামে দাম কত, তা জানতে পারব। সেজন্য আমরা প্রাইজ ডিসকভারির ব্যবস্থা করব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজার কিন্তু তার নিজের মূল্য নিজেই নির্ধারণ করবে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। আমরা যেটা করব, সেটা হলো যৌক্তিক মূল্য আমরা দিয়ে দেব। কে ওই দামের চেয়ে বেশি বা কমে বিক্রি করছে, তা মনিটরিং করব। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই। বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা।
তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনা মানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা নয়। বাজার ব্যবস্থাপনা হলো যৌক্তিক মূল্যে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা। আর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হলো খাদ্যের উৎপাদন, সংগ্রহ ও মজুত ব্যবস্থাটাকে ঠিক রাখা। তারা নির্দেশনা দেবে, সেই অনুযায়ী আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করব।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আর একটি বিষয়ে বলতে চাই, যাতে ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি আসে। কৃষি মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা যে আগে মাঝে মাঝে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমদানি-রপ্তানি করতাম, এখন বাজার মনিটরিং করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে দেব। কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়য় একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব। এতে ভোক্তা থেকে উৎপাদক পর্যায়ে সবাই স্বস্তিতে থাকবে।
চালের বস্তায় দাম বাড়িয়ে লেখা হলে কী করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে দাম বাড়িয়ে লেখার কোনো সুযোগ নেই। এখানে ভ্যারাইটি ভিত্তিক দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। মিলার পর্যায়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় আর ভোক্তা পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা দেখবে। তিনটি মন্ত্রণালয় যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করবে সমন্বয় করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি বাজারে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাব। প্রতিটি মন্ত্রণালয় এতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে। আমাদের ওপর আশা রাখুন, পজেটিভ কিছু দিতে পারব। আমরা সবাই যদি একটু দায়িত্বশীল হই, তাহলে ভোক্তারা উপকৃত হবে।
এর আগে পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে চারটি নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৯ জানুয়ারি সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, চার পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে, এ সকল পণ্যে শুল্ক কী পরিমাণ কমানো হবে, তা এনবিআর এখন ঠিক করবে।