ঢাকা, মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
স্বাধীনতার ৫৩ বছর

একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে তিন গ্রামের মানুষ

মোঃ হাবিব,ময়মনসিংহ | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১০:০১:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও একটি পাকা সেতুর অভাবে যাতায়াতের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তিন গ্রামের মানুষের। তবে দীর্ঘদিনেও সেখানে সেতু নির্মাণ করা হয়নি। কাঠের সাঁকো দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পারাপার হন। শুরুতে তিন গ্রামের লোকজন মিলেই বানার নদীর উপর বানিয়েছিলেন বাশের সাঁকো। বাঁশের এ সাঁকো দিয়ে তিন-চার গ্রামের মানুষ চলাচল করে।

স্থানীয়রা জানান, বানার নদীর দুই পাশে বিষ্ণরামপুর,আকতা, আনুহাদি ও বাবুগঞ্জসহ ৩ টি গ্রাম রয়েছে। এলাকাবাসীর উদ্যোগে স্বাধীনতার পর বানার নদীর ওপর কাঠের সাঁকোটি তিন গ্রামের মানুষের চলাচলের মাধ্যম ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আনুহাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আকতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আকতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বাবুগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, বাবুগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাবুগঞ্জ দাখিল মাদরাসাসহ তিনটি হাফিজিয়া মাদরাসা রয়েছে। এসব স্কুল-মাদরাসার শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন নড়বড়ে এ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। দিনের পালা বদলে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা উন্নয়ন হলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আমরা একটা সেতু পাইলাম না।

রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের আকতা ও আনুহাদি সংযোগ সড়কের সঙ্গে যুক্ত হলেও সেতু না থাকায় যন্ত্রচালিত কোনও যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ১০ মিনিটের পথ এক ঘণ্টা ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় স্থানীয়দের। এতে একদিকে সময়, অন্যদিকে হয় অর্থের অপচয়। অসুস্থ রোগী বা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের হাসপাতালে নিতে স্বজনদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ৬০ মিটারের একটি সেতুর অভাবে এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভোটের আগে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর তার বাস্তবায়ন হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জনগণ ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সাঁকোর ওপর দিয়ে উৎপাদিত পণ্য ও মালামাল পারাপার এবং নিজেরা চলাচল করছেন। স্থানীয়রা অবিলম্বে সেতু নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানাযায়, গ্রামে কয়েক শত বছর আগে ছিল 'আনই রাজা'। রাজার নামইে এখনও রয়েছে বিশাল দিঘি“ আনই রাজার দিঘি”। যা নিয়ে বিভিন্ন কল্প কাহিনী জনশ্রুতি আছে। এ দিঘি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা ছুঁটে আসেন। 

এলাকাবাসী জানান, শুরুতে বানার নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। প্রতিবছর স্থানীয়রাই মেরামত করতেন । প্রায় ৩০ বছর আগে রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে করা হয় কাঠের সাঁকো। সর্বশেষ প্রায় ১০ বছর আগে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সালিনা চৌধুরী কাঠের সাঁকোটি নতুন করে সংস্কার করেছিলেন পরে বর্তমান চেয়ারম্যান মুক্তা চৌধুরী ও সংস্কার করেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলে সংসদ সদস্য প্রার্থীরা আকতা ও আনুহাদি সংযোগ সড়কে বানার নদীর ওপর পাকা ব্রিজ নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। নির্বাচিত হওয়ার পর আর কেউ ব্রিজটির খবর নেন না। 

সরেজমিনে জানাযায়, স্থানীয় আরাজুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বানার নদীর ১০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়। নদীর পশ্চিম পাশে আনুহাদি গ্রামটি কৃষি ও মৎস্য চাষের জন্য উপজেলার মধ্যে অন্যতম। একটি পাকা ব্রিজের অভাবে গ্রামের মানুষ কৃষি ও মৎস্য খাতে তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য থেকে অনেকটা বঞ্চিত হচ্ছে। এ গ্রামের কয়েকশ মানুষ প্রবাসে রয়েছে। গ্রামটিতে পাকা বাড়ি ঘর নির্মাণ করতে গেলে তাঁদের নির্মাণসামগ্রী নিতে বাড়তি খরচ গুনতে হয়। 

মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ছোট বেলা থেকেই শুনতেছি এখানে ব্রিজ হবে।  আজও আমরা সেই ব্রিজের আলো দেখতে পেলাম না। জানি না আমগোর নসিবে ব্রিজ দেখতে পারবো কি না?।

আনুহাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক  স্থানীয় মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, 'আকতা ও আনুহাদি সংযোগ সড়কের বানার নদীর ওপর একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ বিশেষ প্রয়োজন। প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীসহ কয়েক গ্রামের তিন- চার হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে ঝুঁকিপূর্ণ এ কাঠের সাঁকো দিয়ে। সাঁকো থেকে পড়ে অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছে। 

ফুলবাড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, এই  ব্রিজের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত হলে ব্রিজের কাজ শুরু করা হবে।

 

বায়ান্ন/এসএ