ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ওয়ান সিটি টু টাউন এর স্বপ্ন এখন বাস্তব

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১২:০১:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চীনের শিল্পনগরী সাংহাইয়ের মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হবে চট্টগ্রামও- বন্দরনগরীর মানুষের গত এক দশক ধরে দেখা এ স্বপ্ন এখন সত্যি হতে চলেছে। খরস্রোতা কর্ণফুলীর তল ছুঁয়ে টানেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে যে বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে- তা অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে বঙ্গোপসাগর তীরের উপজেলা আনোয়ারাবাসীর জন্য।

 

শনিবার (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এর মধ্যে সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ।

টানেল চালু হলে শুধু আনোয়ারা নয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এতে ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। আবার পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল, প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।

 

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

 

কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে টানেলের অবস্থান ১৫০ ফুট গভীরে। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। টানেলের প্রতি টিউবের প্রস্থ ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৬ ফুট। দুটি টিউবের মধ্যবর্তী ব্যবধান ১১ মিটার।

 

চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড টানেল নির্মাণকাজ করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে প্রকল্পটি যখন পাস করা হয়, তখন এই প্রকল্পের খরচ ছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত। পরে যথাসময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম দফা সংশোধন করে খরচ ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। মেয়াদ বেড়ে যায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। পরে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও শেষ মুহূর্তে নতুন কাজ যুক্ত হওয়ায় টানেল নির্মাণ প্রকল্পের খরচ দ্বিতীয় দফা বাড়ানো হয় ৩১৫ কোটি টাকা। এছাড়া মেয়াদও বাড়ানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসেবে দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার। সর্বশেষ সংশোধিত বাজেটে প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

 

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, টানেলের ভেতর দিয়ে যেতে প্রাইভেট কার, জিপ ও পিকআপ এর জন্য দিতে হবে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। ৩১ বা তার চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। ৫ টনের ট্রাক ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ৫০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাক ৬০০ টাকা, ট্রাক (তিন এক্সেল) ৮০০ টাকা, ট্রেইলর (চার এক্সেল) ১০০০ টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলরের জন্য ১ হাজার টাকার সাথে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা বাড়তি টোল দিতে হবে। টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে চায়না কমিউনিকেশনস কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)।  

 

দুই টিউবের এই টানেলে ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এতে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট সময় লাগবে। প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি এবং বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, টানেল চালু হওয়ার পর ২০২৫ সালে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি। ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০৬৭ সালে।