মানবতা বিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদন্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাযার পর কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে জামায়াত। জানাজায় অংশ নেয়া লোকজনের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওসি, ইউএনও, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, এসি-ল্যান্ডসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি। সহিংসতার এক পর্যায়ে করা গুলিতে নিহত হয়েছেন দোকানী এসময় আহত হয়েছেন দুই থানার ওসিসহ ২০ পুলিশ সদস্য।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চকরিয়া লামার চিরিংগা মামা ভাগিনার মাজারের রাস্তার পাশে ও পেকুয়ার বারবাকিয়া বাজারে একই সময়ে পৃথক এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ ও পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার। আহত পুলিশ সদস্যদের পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গুলিতে নিহত একজন ফোরকানুল ইসলাম (৫০) চকরিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আব্দুল বারিপাড়ার মৃত আবুল ফজলের ছেলে। লামার চিরিঙ্গা রাস্তার মাথা এলাকায় ছোট্ট চায়ের দোকান চালাতেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সোমবার রাতে মারা যাওয়া আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাযা মঙ্গলবার বিকেলে পড়ার ঘোষণা দিয়েছিল কক্সবাজার জেলা জামায়াত। সেই সূত্র ধরে চকরিয়া পাইলট স্কুল মাঠে জানাজা হওয়ার কথাছিল। কিন্তু জেলা জামায়াত তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টে মসজিদে ওয়াক্তিয় নামাজ শেষে শুধু দোয়া করার সিদ্ধান্তের কথা প্রচার করে দুপুরে। এরপরও চকরিয়ায় পাইলট স্কুল মাঠে জামায়াত ও সাঈদীর অনুসারিরা জড়ো হতে থাকে বিকাল তিনটার দিকে। সেখান থেকে তারা লামার চিরিঙ্গা পুরাতন জামে মসজিদে এসে দোয়ায় শরীক হয়।
আরো জানাযায়, সাড়ে তিনটার দিকে তারা মসজিদ থেকে বের হয়। এসময় সদ্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় সিকলঘাট এলাকায় ত্রাণ দিয়ে স্ব স্ব গাড়িতে ফিরছিলেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও), চকরিয়া থানার ওসি, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তাদের গাড়ি লামার চিরিঙ্গা এলাকায় পৌঁছামাত্র গায়েবানা দোয়া হতে ফেরা লোকজনের সামনে পড়ে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা প্রশাসনের গাড়িতে আক্রমণ শুরু করে। ইউএনও'র গাড়ি দ্রুত চালিয়ে আক্রান্ত হওয়া থেকে পার পেলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ওসির গাড়ি ভাংচোরের কবলে পড়েছে। এসময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে দু'জন নিহত হন। এদের একজন স্থানীয় দোকানদার।
চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অকস্মাৎ দুর্বৃত্তরা আমাদের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে। হামলায় আমিসহ ৫ জন আহত হয়েছি। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশ ভ্যান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্তকে বহনকরা গাড়ি। ঘটনাস্থল হতে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ওসি।
অপরদিকে, পেকুয়ার বারবাকিয়া বাজার এলাকায় গায়েবানা জানাজা শেষে পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ওসিসহ আহত হয়েছেন ১৫জন পুলিশ সদস্য। হামলাকারিদের ইট-পাটকেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) ও সহকারি কমিশনারের (এসি-ল্যান্ড) গাড়ির বিভিন্ন অংশ।
হামলায় আহতরা হলেন, পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য, উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শাহিনুল ইসলাম, অমর চদ্র বিশ্বাস, মফিজুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. জসিম উদ্দিন, কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রদীপ কুমার দে, মো. সবুর মিয়া, রবি উল্লাহ, ইমরান হোসেন, রামকৃষ্ণ দাশ, তৌহিদুল ইসলাম, রিপন মিয়া, রিয়াজুল ইসলাম। এদের মধ্যে এসআই শাহিনুল ইসলামের হাত ও অমর চন্দ্র বিশ্বাসের পায়ে আঘাত গুরুতর।
পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার বলেন, বারবাকিয়া বাজারে আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাযা পড়া হয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাজারে টহলে ছিল পুলিশের একটি টিম। নামাজ শেষে লোকজন অকস্মাৎ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় আমি। এসময় আমাদের উপরও হামলা করা হয়। এতে আমিসহ ১৫জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছি। খবর পেয়ে ইউএনও, এসি-ল্যান্ড ঘটনাস্থলে গেলে তাদের গাড়িতেও ইট-পাটকেল মারা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে লোকজন পুলিশের গাড়িতে হামলা করেছে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় আমরা।
এসময় কে বা কারা আমাদের গাড়িতেও ইট-পাটকেল মেরেছে। আমার (ইউএনও) গাড়ির পেছনের লাইটে আঘাত হয়েছে। এসি-ল্যান্ডের গাড়িতে একটু বেশি ক্ষতি হয়েছে জেনেছি। অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, আসাধু লোকজন হামলায় কিশোর বা শিশুদের ব্যবহার করেছে।