ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শতকোটি টাকার মালামাল চুরি পিডি'র মাধ্যমে

চোর সিন্ডিকেটের কবলে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প

স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৪৪:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দেশের মেগা প্রকল্প গুলোর অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প হচ্ছে

কক্সবাজার মহেশখালী মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদের একক ক্ষমতা বলে বিভিন্ন সিন্ডিকেট করে অনিয়ম দুর্নীতির এক স্বর্গ রাজ্য গড়ে তুলেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চার মামলায় প্রায় দেড়শত কোটি টাকার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম সহ ৬ কর্মকর্তা, স্থানীয় এমপি সহ ২১ জনের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। আবার প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত আলফাজের নেতৃত্বে আর একটি চোর সিন্ডিকেট। 

দীর্ঘদিন ধরে চোর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রকল্পের স্ক্রাভ সহ বিভিন্ন মালামাল চুরি করে একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও পিডি আবুল কালাম আজাদের ক্ষমতাবলে পার পেয়ে যায় অন্যরা। এভাবে ধরা পড়েনি শতকোটি টাকার মালামাল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একটি গোয়েন্দা সংস্থা।  তাদের নজরদারীতেই এবার ধরা পড়লো প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্যাবল। তিনটি কন্টেইনারে থাকা প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্যাবল পাচারের সময় ৬ জনকে আটক করেছে নৌবাহিনীর টহল দল।

 

শনিবার ৩১ আগস্ট সকাল ১১ টার দিকে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর একটি বার্জে করে জাহাজে নেওয়ার সময় মালামাল সহ তাদেরকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মিনহাজ। আটককৃতদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে রতি মহারতিদের নাম। বিষয়টি টের পেয়ে এসময় প্রকল্পের ভিতরে থাকা পিডি আবুল কালাম আজাদ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ সহ অনেকেই প্রকল্প থেকে পালিয়ে গেছে বলে জানান নৌবাহিনী সূত্রে।

 

আটককৃতরা হলেন, ইকবাল মেরিনের কর্মরত চট্টগ্রাম ভাটিয়ারী এলাকার বাসিন্দা এবাদুল হকের ছেলে নিজাম উদ্দিন, চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ সেলিম, আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে জাকির হোসেন, ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার মুজিবুল হকের ছেলে মোঃ ফারুক, ফেনী সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দা নুরুল হক, মহেশখালী মাতারবাড়ি এলাকার মোঃ ছগিরের ছেলে মাহমুদুল হক ও নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মোঃ কামাল।

 

এছাড়াও এ ঘটনায় কোল পাওয়ারের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সিকিউরিটি অফিসার আলফাজ উদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সাইফুর রহমান সরাসরি জড়িত বলে তথ্য দিয়েছে তারা।

এছাড়া মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পস্কো কোম্পানির কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও মোঃ আসিফ সিন্ডিকেট করে কোম্পানির কয়েকজন ড্রাইভাররের সাথে সিন্ডিকেট করে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে গাড়ি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

 

নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটন্যান্ট মিনহাজ বলেন, গোপন সূত্রে সরকারী মালামাল পাচার হওয়ার খবর পেয়ে শনিবার সকাল ১১ টার দিকে মাতারবাড়ি বন্দর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। ক্যাবলভর্তি ৩টি কন্টেইনার উদ্ধার করা হয়।তারা অদ্য রাতে সাগর পথে পাচার করার তথ্য রয়েছে। উল্লেখ্য যে, তিনটি কনটেইনারের মধ্যে দুটি কন্টেইনার ক্রেনে করে জাহাজে তুলার জন্য বার্জ জিহাদ (রেজিঃ নং ৪০৪৭০, বিএস নাহার বিল্ডিং, ৩য় তলা, স্টেন্ড রোড, মাঝির ঘাট, চট্টগ্রাম) নামক একটি বার্জে তোলা হয়েছে বাকিটি তোলার আগেই নৌবাহিনীর অভিযানিক দল সেখানে হাজির হলে ধরা পড়ে চুরি।

 

কোল পাওয়ারের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পের কোন কোম্পানি তাদের মালিকানাধীন কোন মালামাল প্রকল্প থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় কোল পাওয়ার প্রথমে ইনভেস্টিগেশন করে দেখে যে মালগুলো কোল পাওয়ারের কিনা। যদি কোল পাওয়ারের না হয় কেবল তখনই কোল পাওয়ার এক্সিট পারমিশন দেয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ক্যাবলগুলো প্রকল্পের বাহিরে বের হয়ে গেলেও কোল পাওয়ার বলতেছে তারা কিছু জানেনা। অথচ উক্ত ক্যাবলগুলে কোল পাওয়ারের সিকিউরিটি হাউজের পাশ থেকে লোড করে নিয়ে আসা হয়েছে। অথচ প্রকল্প এলাকা থেকে যে কোন মালামাল বের হতে ৬ জনের স্বাক্ষর লাগে। কিন্তু এ মালগুলো প্রকল্প এলাকা থেকে একচ্ছত্র ভাবে পিডি আবুল কালাম আজাদ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজের নির্দেশনায় হয়েছে বলে জানান বিশ্বস্ত সূত্র।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যে প্রতিষ্টানের নামে ইস্যু করা,  সেই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ইকবাল মেরিনার এর স্বত্বাধিকারী হচ্ছে কোল পাওয়ার পরিচালক আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা বলে জানা গেছে।