![](https://dainikbayanno.com/storage/news-pic-30.jpg)
বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। একে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে, জনজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তাহলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ সংবিধান সংশোধন করতে পারে না। জনগণের নির্বাচিত সরকারই পারে দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে। তাই এ বছরের মধ্যেই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেবার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ’৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যে গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ দেশ থেকে বিতাড়িত করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত করেছিল। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জীবনবিপন্ন জেনেই যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন; সেটি যেন বাস্তবে রূপায়িত হয়। সাম্য সামাজিক মর্যাদা, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে বিএনপি সংগ্রাম করে যাবে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খুলনার শহিদ হাদিস পার্কে খুলনা জেলা বিএনপি’র বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচির আয়োজক খুলনা জেলা বিএনপি।
সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, অক্টোবর মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার গণহত্যা বিচার হবে উদ্বৃতি দিয়ে বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভরসা রাখছে; জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে তাদেরকে যেন কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রক্ষা করতে না পারে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের একশ’ ১৫/১৬ বার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে; আওয়ামী লীগ একটা চার্জশীট পর্যন্ত দিতে পারেনি।
প্রধান বক্তার বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় বিএনপি’র তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, বিএনপি ১৬ বছর আন্দোলনের আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। কোন ধরনের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। চারিদিকে প্রতিবিপ্লব উঁকি-ঝুঁকি মারছে, তবে সেটা হতে দেয়া হবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিপ্লব ও গণতন্ত্রের প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হবে এ অন্তর্র্বতী সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল সেই সরকারকে কোনো ভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। স্বৈরাচার সরকার যাতে ফিরে আসতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আরো বলেন, সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করেছে। ডেভিল বলতে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকেই বুঝি। কালবিলম্ব না করে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিন, সবাই সাধুবাদ জানাবে। জনগণ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই শক্তিকে দৃশ্যমান করতে হবে। একজন (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র করে কাপড় নিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন যারা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তারা আগামী দিনে পালানোর পথ পাবেন না। সরকার গঠনের ৬ মাস পরে এই ধরনের বিশৃঙ্খলা কেন? আমরা তো একটি সভ্য জাতি। এসব বিশৃঙ্খলা দূর করতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারকে তিনি বলেন, আপনারা সংস্কার করুন, তবে যৌক্তিক সময়ের ভিতরে করুন। বাংলাদেশের মানুষের যে প্রত্যাশা একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচনটি যত দ্রুত দেয়া হবে তা সবার জন্যই মঙ্গল।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এই দু’টি বিষয় নিয়ে এখনো জনগনকে রাজপথে নামতে হবে ভাবলে অবাক লাগছে। দুঃর্ভাগ্য আমাদের। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাবার ৬ মাস গত হলেও; সার্বিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। কারণ, আজও বাংলাদেশের শাসনযন্ত্রে ফ্যাসিবাদের দোসরেরা বর্তমান। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে বসিয়ে আপনারা (অন্তর্র্বতীকালীন সরকার) ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম করতে চাইবেন? আবার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে স্প্রিটের কথা বলবেন; এটি দ্বিচারিত ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ যে সব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে-সেটি ২০০৯ সাল থেকে বিএনপি বলে আসছে। আমরা বারবার বলেছি-বাংলাদেশের মানুষ কাকে ভোট দেবে সেটি তাদের ব্যাপার; কিন্তু তাদের ভোট দেবার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিসমূহ তুলে ধরেন তিনি।
সম্প্রতি খুলনা সফরে পাট ও বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তৃতার উদ্বৃতি উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেছেন, ‘তিনি বলেছেন (পাট উপদেষ্টা) তারা খালিশপুর তথা খুলনা অঞ্চলের বন্ধকৃত পাটকলগুলো চালু করতে পারবেন না। তারাও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মতোই শ্রমিক-জনতার কষ্টে অর্জিত পাটকলগুলো লীজ দিতে চায়। আমরা বিএনপি বলছি, জনগণ যদি আমার দল বিএনপিকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দেয়-আমরা খুলনা অঞ্চলের সকল বন্ধ পাট কল-কারখানাগুলো চালু করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, খুলনা মহানগর শাখার আহবায়ক এড. এস এম শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব মোঃ শফিকুল আলম তুহিন।
জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান মন্টুর সভাপতিত্বে সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক এড. মোমরেজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মোঃ মজিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা নার্গিস আলী, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক (প্রোগ্রাম) সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, সৈয়দা রেহেনা ঈসা, জেলা যুবদলের আহবায়ক এবাদুল হক রুবায়েত ও সদস্য সচিব নাদিমুজ্জামান জনি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নবনির্বাচিত আহবায়ক আতাউর রহমান রুনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মিরাজুর রহমান মিরাজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান মিস্ত্রী, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী এড. তসলিমা খাতুন ছন্দা, কৃষক দলের মোল্লা কবির হোসেন ও জেলা ছাত্রদলের গোলাম মোস্তফা তুহিন প্রমুখ। শুরুতেই মহাগ্রন্থ আল-কোরআন তিলাওয়াত করেন হাফেজ মাওলানা ফারুক হুসাইন। গীতা পাঠ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সুদীপ্ত মল্লিক।
জনসভার শুরুতেই বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ সুস্থতা কামনা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু ও নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রার্থনা, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘বীরউত্তম’, তার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোসহ দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সকল শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। একই সাথে চিকিৎসাধীন খুলনা জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ আবু হোসেন বাবু’র পরিপূর্ণ সুস্থতা কামনা করেন নেতৃবৃন্দ।
গেল বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সর্বপ্রথম কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচি খুলনা দিয়ে শুরু হল। ফলে দুপুর গড়াতেই জেলা ও মহানগর, থানা/উপজেলা/পৌরসভা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের খন্ড খন্ড মিছিলে-মিছিলে ভরে উঠে খুলনার শহিদ হাদিস পার্ক। জনসভা আনুষ্ঠানিক শুরুর পূর্বেই খান-এ সবুর রোড (লোয়ার যশোর রোড) এবং কেডি ঘোষ রোডসহ আশপাশের এলাকাসমূহ নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বিশাল জনসমূদ্রে রূপ নেয়। দীর্ঘদিন পর বড় পরিসরে শহিদ হাদিস পার্কে এমন জনসভায় নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেন। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে নেতা-কর্মীদের মুহুর্মুহু শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে খুলনার রাজপথ।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ