ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নির্বাচন-আন্দোলন

তফসিল ঘোষণার পরই জানা যাবে জাতীয় পার্টির ‘অবস্থান’

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:০৩:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন ঠেকাতে মরিয়া বিএনপি। তাদের সঙ্গে জামায়াতসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৪০টির বেশি দল সক্রিয় আছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আছে নবগঠিত তৃণমূল বিএনপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জাসদ-ইনু) বেশকিছু রাজনৈতিক দল। তবে আন্দোলন বা নির্বাচন কোথাও নেই কাগজে-কলমে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (জাপা)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দলটি তার অবস্থানও সুস্পষ্ট করছে না।

 

দলটি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে এমন ‘ফাঁকা আওয়াজ’ দিলেও বাস্তবে নির্বাচনে যাবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচন ও আন্দোলন কোনো কিছু নিয়েই কোনো ব্যস্ততা বা কর্মসূচি নেই দলটিতে। দলের শীর্ষ নেতারাও স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না।

 

নির্বাচনের যখন মাত্র দুই মাস বাকি তখন দলটির নেতারা একবার ৩০০ আসনে ভোট করার কথা বলছেন, আবার বলছেন নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। একবার বলছেন আন্দোলন করার সামর্থ্য নেই, আবার বলছেন ১৬ কোটি জনগণ ইট ছুড়ে মারলেই সরকার শেষ হয়ে যাবে। শীর্ষ নেতাদের এমন অবস্থানে দোটানায় দলটির কর্মীরা।

 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে জাতীয় পার্টির অবস্থান সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে দলটি এক রকম অবস্থান নেবে। আবার সরকার যদি বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনে যায়, তাহলে সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতা করে আসন বাড়ানোর পরিকল্পনায় আগাবে দলটি।

 

দলটির একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকার চাপে রয়েছে। সঠিক সময়ে নির্বাচন নিয়েও সংশয় আছে। আগামীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, শেষ মুহূর্তে সেটি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চায় দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে জাতীয় পার্টির অবস্থান সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে দলটি এক রকম অবস্থান নেবে। আবার সরকার যদি বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনে যায়, তাহলে সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতা করে আসন বাড়ানোর পরিকল্পনায় আগাবে দলটি।

 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা রাখতে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছেন শীর্ষ নেতারা। অন্যদিকে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত খবর রাখছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও দলটির মহাসচিব মুজিবল হক চুন্নু। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হওয়ার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তফসিলের আগে বা পরে জাপার সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের যৌথসভা হতে পারে। ওই সভায় পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাবে দলটি।

 

দলটি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে এমন ‘ফাঁকা আওয়াজ’ দিলেও বাস্তবে নির্বাচনে যাবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচন ও আন্দোলন কোনো কিছু নিয়েই ব্যস্ততা বা কর্মসূচি নেই দলটিতে। দলের শীর্ষ নেতারাও স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না।

 

দলটির অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেটা কীভাবে হবে তা সম্মেলন ও সভাগুলোতে আমাদের চেয়ারম্যান-মহাসচিব বলছেন। বিরোধীদল যেভাবে আন্দোলন করছে, আমরা সে ক্যাটাগরিতে যাচ্ছি না। কিন্তু দল কী চাচ্ছে সেটা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলছি। জাতীয় পার্টি একেবারে মাঠে নেই, এটা ঠিক নয়। আমাদের নানান কর্মসূচি চলছে। যার যার দাবি আদায়ে দলগুলো রাজপথে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতে যেন কারও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেটি আমরা কামনা করি।

 

সংঘাতবিহীন নির্বাচন করতে ‘আনুপাতিক হারে নির্বাচন’ নামে নতুন ফর্মুলার কথা বলছে দলটি। বিভিন্ন ফোরামে নতুন ফর্মুলার পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা।

 

আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেটা কীভাবে হবে তা সম্মেলন ও সভায় আমাদের চেয়ারম্যান-মহাসচিব বলছেন। বিরোধী দল যেভাবে আন্দোলন করছে, আমরা সে ক্যাটাগরিতে যাচ্ছি না। কিন্তু দল কী চাচ্ছে সেটা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলছি। জাতীয় পার্টি একেবারে মাঠে নেই, এটা ঠিক নয়।—অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া

 

গতকাল (সোমবার) ‘উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে আনুপাতিক হারে ফলাফলের নির্বাচন করতে হবে। আমাদের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের ফর্মুলা আছে, সবাই সম্মত হলেই আমরা ঘোষণা করবো। আওয়ামী লীগ আর বিএনপির এক দফা মানুষ বোঝে না, দেশের মানুষ চায় সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা নির্বাচনে যাবো কি যাবো না, এটা কথা নয়। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন।

 

ওই অনুষ্ঠানে নির্বাচন ও আন্দোলন প্রসঙ্গে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচন সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে হবে কি না, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না- এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক বেশি উৎকণ্ঠা ও দোদুল্যমান অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সবাই আতঙ্কিত ও সন্দিহান। মানুষের কাছে অগ্রাধিকার হচ্ছে সামনের নির্বাচন। আমরা সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সেই সঙ্গে আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।