ঢাকা, শনিবার ৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৫শে কার্তিক ১৪৩১

প্রশাসনিক ব্যর্থতায় জাবির বটতলায় চলছে অস্বাস্থ্যকর খাবারের রমরমা ব্যবসা

আকিব সুলতান অর্নব, জাবি প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:১৭:০০ অপরাহ্ন | শিক্ষা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বটতলার খাবারের দোকানগুলোতে চলছে অস্বাস্থ্যকর খাবারের রমরমা ব্যবসা। বাসি খাবার পরিবেশন যেন নিয়মিত ঘটনা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বছরের পর বছর প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই বটতলার হোটেলগুলোতে এভাবেই অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করছে দোকানগুলো। 
 
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘বটতলার দোকানগুলোতে কার্যত নিয়ন্ত্রণ নেই প্রশাসনে। ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের টাকা দিয়েই পরিচালিত হচ্ছিল এই দোকানগুলো। নিচু বটতলা নিয়ন্ত্রণ করত বঙ্গবন্ধু হলে আর উঁচু বটতলা নিয়ন্ত্রণ করত ভাসানী হল ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হল। রাজনৈতিক ছত্রছাত্রায় পরিচালিত হওয়ায় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করলে পুনরায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ার খোলা হতো এসকল দোকান। রাজনৈতিক দল চলে গেলেও তাদের মানহীন খাবার পরিবেশন করা কমে নি বরং তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর অতিরিক্ত মশলা, টেস্টিং সল্ট ব্যবহার তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আগের দিনের বাসি মাছ মাংস পরিবেশনের পাশাপাশি সেগুলা দিয়ে ভর্তা বানিয়েও পরিবেশন করা হয় দোকানগুলোতে।'
 
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নুরজাহান হোটেলের খিচুড়ির চাল ও ডাল সিদ্ধ হয় নি। আলু ভর্তার আলুর মধ্যেও গন্ধ পাওয়া যায়। মাংসের ঝোলের মধ্যেও অতিরিক্ত মশলা ও পেঁয়াজের আধিক্য দেখা যায়। এসকল বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে দোকান মালিক চেতে যায় এবং সে বলে অন্যরা বলেনি আপনার এত সমস্যা কেন বলে আক্রমণাত্মকভাবে এগিয়ে আসে। একই অবস্থা বাংলার স্বাদ রেস্টুরেন্ট, রাবেয়া ভর্তা বাড়ি , জেকস কিচেন, সুজন হোটেল, তাজমহল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, জান্নাতুল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টসহ বটতলার সকল দোকানেরই। 
 
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৫১ ব্যাচের (২য় বর্ষ) শিক্ষার্থী সজিব আহমেদ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন হলের শিক্ষার্থী একটা বড় অংশ প্রতিনিয়ত বটতলার দোকানগুলোতে খেতে বাধ্য হয়। কিন্তু বটতলার খাবারের দাম ও মান ঠিক আগের মতোই আছে। তাদের রান্নার পরিবেশ অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় আমি নিজেই বেশ কয়েকদিন তরকারি ও শাকে পোকা পেয়েছি। এছাড়া টেস্টিং সল্টযুক্ত এসকল খাবার দোকানদাররা রাখেন রাস্তার পাশেই ফলে খাবারের মধ্যে পোকা মাকড় ও ধূলাবালি এসে পড়ে। এছাড়া তিন চারদিনের বাসি খাবার ও তেল ব্যবহার তো নিত্যদিনের ব্যাপার।'
 
প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে দায়ী করে তিনি আরও বলেন, 'রাজনৈতিকভাবে বরাদ্দ পাওয়া এসকল দোকানদাররা এতদিন রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং শিক্ষকদের অর্থ দিয়ে দোকান পরিচালিত করত। ফলের বাসি ও অস্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে প্রশ্ন করলেও তারা কখনোই কর্ণপাত করে নি। তারা মূল্য তালিকা না মেনে নিজেদের মতো মূল্য নিয়ে থাকে৷ প্রশাসনের উচিত কঠোরভাবে এসকল অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। না হলে এই অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন চলতেই থাকবে।'
 
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস ইয়থ বাংলাদেশের জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ফাওজুল কবির বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা না থাকায় আমরা দোকানগুলোতে অভিযান চালাতে পারছি না। তবে পূর্বে অভিযান চালিয়ে কোনো দোকানকে অস্বাস্থ্যকর ও বাসি খাবার পরিবেশনের দায়ে আমরা জরিমানা করে বন্ধ করে দিলে ছাত্রলীগ গিয়ে শিক্ষকদের কাছে তদবির করত। দোকানিদের থেকে টাকা নিয়ে তারা শিক্ষকদের দোকান খুলতে বাধ্য করত। এছাড়াও দোকানগুলোতে অতিরিক্ত টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করে থাকে বটের দোকানগুলো। প্রয়োজনের অতিরিক্ত রান্না করে তা দীর্ঘদিন রেখে তারা ব্যবসা করতে ইচ্ছুক। তাদেরকে এ বিষয়ে বার বার নিষেধ করা হলেও তারা তা মানে নি কখনো। এছাড়া হল প্রশাসন কখনোই আমাদের সাথে বটতলার কোনো দোকানে অভিযানে যায় নি। হলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এ সকল দোকান পরিচালিত হতো। প্রশাসনও চলত তাদেরই কথায়। মূলত প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছিল বলেই বটতলায় খাবারের এই দুরবস্থা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, 'বটতলার খাবারগুলোর এই নাজুক অবস্থা দীর্ঘদিনের। হল প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও রাজনৈতিক কারণে পূর্বের প্রশাসন খাবারের মান নিশ্চিতে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে নি। আমরা খুব দ্রুতই হল প্রশাসন ও শৃঙ্খলা কমিটি প্রদান করব। এরপর আমরা প্রয়োজনে টিম আকারে বটতলার খাবারগুলো মনিটরিং করব। খাবারের মান ও রান্নার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত ও খাবারে অস্বাস্থ্যকর কোনো কিছু যাতে তারা ব্যবহার করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখা হবে। একই সাথে তাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তিপত্রও আমরা পর্যালোচনা করে দেখব। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে থাকলে সে বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'