ঢাকা, শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি, প্রায় ৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, বেড়েছে দুর্ভোগ

মোঃ জালাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৬ অগাস্ট ২০২৪ ০৮:৩৩:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে উজানে বৃষ্টিপাত না থাকায় মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই, কুশিয়ারা-সহ সবকটি নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে মনু ও ধলাই নদীর ভেঙে যাওয়া দুটি স্থানের বাঁধ মেরামত কাজ শুরু হয়েছে।
সোমবার ২৬ আগস্ট ২০২৪ ইং, সকালে সরেজমিনে মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদী পাড়ে বন্যা দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেলো দুদিনে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ উঁচু স্থানের পানি সরে গেছে। এতে অনেকের বাড়ি ঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যায়। দেখা যায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনেরা তাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফিরছেন। অনেকে আবার বন্যায় ধসে পড়া নিজেদের ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ করছেন। সেই সঙ্গে বসতঘর ও নিজ ঘরের ভিতর আটকে থাকা কাদা পানি সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রাজনগর উপজেলার ৬নং টেংরা ইউনিয়ন এলাকায় কথা হয় মোঃ তোফায়েল মিয়া-সহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক লোকজনের সঙ্গে। তারা সবাই বলেন, তৃতীয় দফা বন্যায় তাদের এলাকায় ৮ থেকে ৯ ফুট পানি উঠেছে। ঘরের চালের সঙ্গে নদীর পানি ছিল। গেলো দুদিনে এসব পানি সরে গেছে। এখন তারা বাড়ি ঘরে ফিরছেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনেরা বলেন, দফায় দফায় বন্যায় তারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কারো ঘর দরজা ভেঙে গেছে। আবার কারো বসতঘর ধসে গেছে। একই অবস্থা জেলায় প্রতিটি বন্যা দুর্গত এলাকায়। মনু পাড়ের বন্যা দুর্গত লোকজনেরা চরম বেকায়দায় পড়ছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টিপাত কমে আসায় মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই, কুশিয়ারা নদীর পানি দ্রুততার সঙ্গে নামছে। এতে বন্যার উন্নতি হচ্ছে। তবে এ রাজনগর, কুলাউড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়ি ঘরে এখনও পানি রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এর দেয়া তথ্য মতে, সোমবার দুপুর ১২ টার সময় মনু নদী কুলাউড়া মনু রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ২৮৫ সেন্টিমিটার ও শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ধলাই নদী কমলগঞ্জ রেলওয়ে ব্রিজের কাছে ৩৩৪ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারা নদী শেরপুর ব্রিজের কাছে ০৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, সাত উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৩ জন। ১০২ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ হাজার ৯১৭ জন লোক আশ্রয়ে রয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় আর্থিক বরাদ্দ রয়েছে নগদ ৪৫ লাখ টাকা। বিতরণ করা হয়েছে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চাল বরাদ্দ আছে এক হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন। বিতরণ করা হয়েছে ৮২৬ মেট্রিক টন চাল।
এদিকে দেখা যায়, জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনরা বন্যায় দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে। তবে অনেকেই জানিয়েছেন প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে মনু নদী কুলাউড়া আশ্রয়ণ ও কমলগঞ্জের ধলাই নদী ঘোড়ামারা ভাঙন এলাকায় বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করেছে। এ দুটো বাঁধ মেরামতের পর অন্য ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ করবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।