আগামী বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের তুলনায় ভোগ্যপণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম হওয়ায় এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রমজান মাসে ছোলা, খেজুর, ভোজ্য তেল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি এবং মসলা প্রভৃতি পণ্যের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সাধারণত ব্যবসায়ীরা তিন থেকে চার মাস আগে এসব পণ্য মজুদ করতে শুরু করেন। তবে এবার আমদানিতে গতি কম থাকায় বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার আগেভাগে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) মার্জিন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে চাল, গম, ডিম, ভোজ্য তেল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা এবং খেজুরের মতো ১১টি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ভোজ্য তেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) দেশে চিনি আমদানি হয়েছে চার লাখ ৩৮ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ে আমদানি হওয়া পরিমাণের তুলনায় দুই লাখ সাত হাজার টন কম। দেশের বার্ষিক চিনি চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন হলেও আমদানির এই নিম্নগতি চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও বাজারের অবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। আমদানি হ্রাসের পাশাপাশি বৈশ্বিক পণ্যের দাম এবং ডলারের মজুত সংকটের প্রভাব নিত্যপণ্যের মূল্যে আরও চাপ তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আগাম উদ্যোগের পাশাপাশি বাজার তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পণ্যের দাম রাখতে এই সময় যথাযথ পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা।
পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষা করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকলে বাজারের অস্থিরতা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
বায়ান্ন/এএস