দুই দিনের সফরে সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর মস্কোর কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই প্রথম বাংলাদেশে আসছেন। ঢাকা-মস্কোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঝালাইসহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ল্যাভরভের এ সফরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বলে মনে করছেন ঢাকার কূটনৈতিক অঙ্গন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা-মস্কোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের তথ্য ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে। মস্কোর একটি সূত্র জানায়, আগামী সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন ল্যাভরভ। ঢাকা হয়ে দিল্লিতে যাবেন তিনি। তার আগে ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসবেন তিনি।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্রও বলছে, দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে আসবেন ল্যাভরভ। আগামী ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকায় অবস্থান করবেন।
ঢাকা-মস্কোর কূটনীতিকরা মনে করছেন, ল্যাভরভের ঢাকা সফরে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উঠে আসবে। এক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিস্থিতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা ইস্যু থাকবে আলোচনার টেবিলে।
পাশাপাশি ইউক্রেন পরিস্থিতি, ভূ-রাজনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সমর্থনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া জ্বালানি সহযোগিতা এবং রাশিয়া থেকে গম ও সার আমদানির বিষয়ে ঢাকা গুরুত্ব দেবে বলে মনে করছে সূত্রগুলো।
ঢাকা সফরে ল্যাভরভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। আর আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে।
ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক মেরূকরণ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক হিসাব কষেই চলতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। সম্পর্ক রক্ষায় করতে হচ্ছে ভারসাম্য। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সতর্ক থাকতে হচ্ছে ঢাকাকে। এ মুহূর্তে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফর নিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কোনো বন্ধু রাষ্ট্রকে কোনো সফরকে অন্য দিকে প্রবাহিত করা কিংবা তার দলে টানার জন্য এটা করা হচ্ছে, এমনটা ভাবা ঠিক হবে না।
কূটনৈতিক এক বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদানকে বাংলাদেশ সবসময় গুরুত্ব দিয়ে আসছে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে থাকা দেশটি অতীতের ধারাবাহিকতায় সম্পর্ক আরও গভীর করা কিংবা এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেবে। একই সঙ্গে উভয়পক্ষ হয়ত যার যার নিজস্ব চাওয়া-পাওয়ার কথা বলবে। এছাড়া কথা হতে পারে সম্পর্কের নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েও।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া একটা বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। আমি মনে করি, সফর হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। যদি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও আসেন সেটাকেও স্বাভাবিক বলে মনে করি আমি। বাংলাদেশ যেহেতু একটা কাঠামো তৈরি করেছে এখানে একাধিক দেশ আসবে, এটাই নিউ নরমাল। এটাকে চাপ হিসেবে বা নিজের দলে টানার ব্যাপার না। কারণ সব দেশের একটা স্বার্থ রক্ষা করার বিষয় থাকবে।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই চাইবে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যেন লাভবান হতে পারে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি এখানে আসে এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে, রূপপুরের ব্যাপারটা বিশাল। এখানে রাশিয়ার বিনিয়োগ আছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সহযোগিতা জোটের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ল্যাভরভের ঢাকা সফর বাতিল করে মস্কো।