বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বাড়ি জেলার ভেড়ামারা উপজেলায়। কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের জোটের সমীকরনে ভেড়ামারায় হাসানুল হক ইনু দলের নিজস্ব প্রতিক (মশাল) বাদে নৌকা প্রতিক নিয়ে তিনবার সংসদ সদস্য। আর একই উপজেলায় একাধিকবার পরাজিত মাহবুব উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া সদরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। হানিফ কুষ্টিয়ায় অনেক উন্নয়ন করেছে। একজন্য তাকে কুষ্টিয়ার উন্নয়নের রুপকার বলা হয়। হানিফের বড় সাফল্যের মধ্যে একটি সন্ত্রাস কবলিত কুষ্টিয়াকে সন্ত্রাস মুক্ত করা। তার নির্বাচিত এলাকা সদরকে সন্ত্রাস মুক্ত করলেও তার নিজ এলাকা ভেড়ামারায় নিয়মিত ঘটছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বিগত ৫ বছরে অন্ততপক্ষে শতাধিকের বেশীবার আওয়ামী লীগ ও জাসদ নেতাকর্মীদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের একাধিক অনুসারী মৃত্যু বরণ করেছেন। সর্বশেষ ৮ আগষ্ট দুই দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কুপিয়ে ও গুলিবিদ্ধ আহত পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা যান। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জাসদ নেতা কর্মীর বাড়িতে ব্যাপক হামলা চালায়। জাসদ যুবজোট নেতার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘড়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাত চালায় বলে অভিযোগ করেন জাসদ নেতাকর্মীরা। এখনো ভেড়ামারাতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি থমথমে। আবারো সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সংসদীয় এলাকায় বিগত পাঁচ বছরে শতাধিক রক্তকেই সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে জাসদ নেতাকর্মীদের আঘাতে অন্তত দুইজন আওয়ামীলীগ নেতা মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়াও আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বেশ কয়েকজন। ভেড়ামারাতে আওয়ামীলীগ জাসদ সংঘর্ষ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। স্থানীয় কোন নির্বাচন আসলে এই সংঘর্ষ বের হয়ে যায় কয়েকগুণ। হত্যাকান্ড ও পাল্টাপাল্টি হামলায় জোটের অন্যতম শরীর দুই দল আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভেড়ামারার রাজনীতিতে নিচ্ছে নতুন মেরুকরণ। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভেড়ামারা রাজনীতির মাঠ। আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা কর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সমর্থকদের ভোটে ইনো নির্বাচিত হলেও কর্মীদের কোনো খোঁজখবর রাখেন না। উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর জাসদ নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা ও জুলুম চালায়। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা ইনুর নির্বাচন করবে না বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মিরপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বিগত তিনটি নির্বাচনে মিরপুর ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীসহ সবাই ইনুর ভোট করে ইনু কে জিতিয়েছে।ভোটে জিতে এমপি হয়ে ইনু সাহেব আমাদের কথা ভুলে যান। উল্টো আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেন। আসন্ন নির্বাচনে মহাজোট থেকে ইনু পুনরায় নমিনেশন পেলে নেতাকর্মীরা সাধারণ জনগণ ইনুকে ভোট দেবে না বলে মনে হচ্ছে। ২০০৮ সালের আগে সকল নির্বাচনে জাসদ সভাপতি হাসানুল ইনু মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে প্রতিটি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এরপর মহাজোর থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে টানা তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। মাহবুব উল আলম হানিফের এই আসনটি মহাজোটের স্বার্থে ২০০৮ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু কে ছেড়ে দিলে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। মাহবুবুল আলম হানিফ কে কুষ্টিয়া সদর আসন দেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে মিরপুর ভেড়ামারা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা সভা করে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন ইনুকে ভোট না দেওয়ার। এরপর মহাজুটি বাঁধে টানা পড়ুন। পরে হায় কমান্ডের নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইনুর ভোট করেন। ভোটে জিতে হাসানুল হক ইনুর নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন শুরু করে। এবারের ভোটে ও ইনুর পক্ষে ভোট না করার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ আসনে এবার মিরপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন এর নাম শোনা যাচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীরা তাকেই মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ার জন্য হাই কমান্ডের কাছে আবেদন করবেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও জাসদ উপরের উপরে দোষ চাপাচ্ছেন। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপন জানান, আওয়ামী লীগের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা কিছু ষড়যন্ত্রকারী যে কোন বিষয়কে পুঁজি করে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধানোর চেষ্টাই থাকে। জেলা জসদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোরশেদ আলম জানান, ভেড়ামারা তে গুষ্টিগত কিছু সংঘর্ষকে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বলে চালিয়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের কতিপয় কিছু নেতা কর্মী। ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল হক ছানা জানান, বিএনপি জামাতের কিছু অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসী দিয়ে জাসদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ দলের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী সাংবাদিকদের জানান,ভেড়ামারাতে স্থানীয় কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য সংঘর্ষে কয়েকটি নৃশংস খুন হয়েছে, যেগুলো জাসদ এবং আওয়ামী লীগের উপর এসে পড়ছে। সংঘর্ষ বা খুনের সাথে কোন দল তড়িত নয়। আগামী নির্বাচনে এর কোন প্রভাব পড়বে না। তবে স্থানীয়রা মনে করছে দুই দলের সংঘর্ষ নিরসন না করা গেলে আগামীতে ভোট ও জোটের উপরে প্রভাব পড়বে।