ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আলীকদমে তিন কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গণনার দাবি

সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ, আলিকদম : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৫ জানুয়ারী ২০২২ ০৯:০৭:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বান্দরবানের আলীকদম সদর ইউনয়ন পরিষদ নির্বাচন তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হলেও তিনটি ভোট কেন্দ্র চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভোট কারচুপি ,এজেন্ট বের করে দেওয়া, প্রার্থীর এজেন্টের নিকট রেজাল্টশীট হস্তান্তর না করা ও জোর পূর্বক পোলিং অফিসারের বাড়ীতে ডেকে এনে রেজাল্টশীটে স্বাক্ষর নেওয়াসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছেন তৃতীয়ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী আলীকদম সদর ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের পরাজিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা।

 

পরাজিত প্রার্থীরা খোদ পিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুনরায় স্ব স্ব কেন্দ্রে ভোট গণনার দাবি করেন । এরই মধ্যে উক্ত কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন ও ভোট পূণ-গণনার আবেদন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি প্রেরণ করেছেন বলে জানান তারা।

 

সদর ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পদপ্রার্থী খারঙু ম্রো অভিযোগ করে বলেন,২৮ নভেম্বর অনুষ্টিত ইউপি নির্বাচনে ৭নং ওয়ার্ড়ের কেন্দ্রে আমার এজেন্ট রেংনং ম্রো সাথে খারাপ আচরণ করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। আমার এজেন্টকে রেজাল্টশীটে স্বাক্ষর করতে দেয়নি তার জলন্ত প্রমাণ রেজাল্টশীটে আমার এজেন্টের স্বাক্ষর না থাকা।তিনি আরও বলেন,আমি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর পিছিয়ে পড়া ম্রো জনগোষ্ঠীর লোক হওয়ায় নির্বাচনে কেন্দ্র আমার এজেন্ট পাইংত্র ম্রোকে ভোট গণনার সময় কাছে যেতে না দেওয়ায় বাকবিতন্ডা হলে পোলিং অফিসার আজিম উদ্দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।

 

৮নং ওয়ার্ডের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হুমায়ন কবির কেন্দ্রে আমার এজেন্টসহ কাউকে রেজাল্টশীট দেননি।বার বার যোগযোগ করলেও নানা অজুহাতে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করলেও সেখানে রেজাল্টশীট নাই বলে জানান কর্তৃপক্ষ। কিছু সময়ের জন্য একটি মনগড়া রেজাল্টশীট দেওয়ালে ঝুলিয়ে দিয়ে একটি ভিডিও দৃশ্য ধারণ করে,পরে রেজাল্টশীটটি ছিড়ে ফেলে দেন।

 

খারঙু ম্রো একেই অভিযোগ তুলেন ৯নং ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রের নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বলেন,ইতিহাসে এত ভোট দিয়েছে এই ওয়ার্ডে প্রথমবার দেখলাম। যাদের ভোট গ্রহন দেখানো হয়েছে,সেই অধিকাংশ ভোটার মারা গেছেন ভোটের অনেক আগেই। মৃত ব্যক্তি কি ভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিল? ৭নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী রুইচং ম্রোও বিরেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, প্রিসাইডিং,সহকারী প্রিসাইডিং, পোলিং কর্মকর্তারা ভোট গণনা নিয়ে তালবাহনার প্রতিবাদ করলে আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয় ,বের করার পর থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত তারা কি করেছে জানিনা। তাছাড়া ভোট গণনার আগেই রেজাল্টশীটেবিরেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমার এজন্টের নাম বিবাচন্দ্র ত্রিপুরা ও মার্কা মোরগ কিন্তু রেজাল্টশীটে আমার এজেন্ট দেখানো হয়েছে মোঃ সোহেল রানাকে এবং আমার মার্কার মোরগের জায়গায় টিউবওয়েল লিখে সোহেল রানার স্বাক্ষরিত রেজাল্টশীট আমার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।

 

৮নং ওয়ার্ডের পরাজিত সদস্য পদপ্রার্থী মেনপয় মুরুং বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকে প্রিসাইডিংসহ উক্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তারা একজন সদস্য প্রার্থী ছাড়া অন্য সকল সদস্য পদপ্রার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। বিজয়ী প্রার্থী ছাড়া অন্য কাউকে কেন্দ্রের আশপাশে দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয়নি। এমনকি ভোট গণনার সময় সন্দেহ প্রকাশ করায় আমার এজেন্টকে বের করে দেয়। নিজের মত একটি রেজাল্টশীট সাময়িক সময়ের জন্য দেওয়ালে ঝুঁলিয়ে দিলেও পরে সেটি সরিয়ে ফেলেন। বার বার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হুমায়ন কবিরের কাছে রেজাল্টশীট চাইলে দেয়নি,নির্বাচন অফিস থেকে নিতে বলেন। এক পর্যায় আমার সম্প্রদায় তুলে অশালীন কথা বলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। আসলে আমি অনিয়মের বিচার কার কাছে চাইব,এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে যাওয়ার মত অর্থ আমার নেই। এখন পর্যন্ত আমি কত ভোট পেয়েছি তার রেজাল্টশীট এত দৌড়েও পাইনি।

 

রেজাল্টশীট প্রার্থীদের না দেওয়ার কারণসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে ৮নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হুমায়ন কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবাইলে সব কথা বলা সম্ভব না সরাসরি বলবেন । কিন্তু তারপর টানা দুইদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও উক্ত কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।

 

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আতিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান,নির্বাচনের পরে অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করতে হবে,নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে আমাদের যে নির্দেশনা দিবেন,সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।