ঢাকা, রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

আসন সমঝোতা: আরও পরে সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৩:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

জোটসঙ্গী ১৪ দলসহ নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ আসন সমঝোতা করবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দলটির নেতারা বলছেন, এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি, আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে।

 

বিগত তিনটি নির্বাচনে ১৪ দল, জাতীয় পার্টিসহ আরও দুই-একটি দলের সঙ্গে আসন সসমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। এমনকি ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ কিছু আসন ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি। এবারের নির্বাচনেও বিএনপিসহ বেশকিছু দল অংশ নিচ্ছে না। তারপরও কিছু বাস্তব কারণ এবং অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও আসন সমঝোতা হবে কি না, জোটসঙ্গী দলগুলো এবং আওয়ামী লীগের মধ্যেও এ আলোচনাটা সামনে চলে এসেছে।

 

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য জোটের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। আবার যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, সেখানে আওয়ামী লীগের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় জোটের বিষয়টিও জরুরি নয় দলটির জন্য। ইতোমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও সেটা স্পষ্ট হয়েছে।

 

গত ২৫ নভেম্বর প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট করবে কি না, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের প্রতিপক্ষ যদি বড় জোট করে, সেখানে জোটের কথা ভাবা হবে। এছাড়া কেন জোট করব? প্রয়োজন না থাকলে তো জোট করব না।

 

আওয়ামী লীগের ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, জোটের বিষয়ে আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত এই অবস্থানেই রয়েছে। তবে সংসদে বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টিও চিন্তায় আছে। কারণ যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির কিছুটা অবস্থান রয়েছে। কিন্তু দুই-চারটি ছাড়া অন্য আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসার অবস্থায় জাতীয় পার্টি নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রভাব, শক্তির কাছে অনেকেই টিকতে পারবে না।

 

আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টিও রয়েছে। দীর্ঘ দিনের এই নিজস্ব জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কী হবে, সেটাও এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। যদিও দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে জোটে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এবারের নির্বাচনও জোটগতভাবে অংশন নেবে ১৪ দল। গত বছর ১৫ মার্চ ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জোটের প্রধান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

 

জোটের দলগুলোর প্রার্থীরাও অতীতের মতো জোটগতভাবে এবং নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ৩০ নভেম্বর। এর পর এখন পর্যন্ত ১৪ দলের আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোনো সিদ্ধন্ত নেয়নি।

 

এদিকে ১৪ দলের জোটসঙ্গী দলগুলোকে আসন ছেড়ে দেওয়া না হলে জাতীয় পার্টির চেয়েও এ দলগুলোর প্রার্থীদের বেশি প্রতিকুল পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।

 

১৪ দলের একাধিক সূত্র জানায়, আসন সমঝোতা না হলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ বিরোধী যে ভোট রয়েছে, তারা সেটা টানতে পারবেন বা চেষ্টা করতে পারবেন। কিন্তু ১৪ দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সেটাও সম্ভব হবে না। কারণ এই দলগুলো দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের জোটে রয়েছে এবং নৌকা মার্কা নিয়ে টানা তিনটি নির্বাচন করেছে। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও তাদের প্রভাব ও দলটির সাংগঠনিক শক্তির কাছে দাঁড়াতে পারবে না। এসব নিয়ে চিন্তায় আছেন ১৪ দলের নেতারা।

 

বিষয়টি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের চিন্তায়ও রয়েছে বলে দলটির সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব এবং দীর্ঘ দিনের জোটসঙ্গী—বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে একটা সমঝোতা হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে আরও দুই চার দিন পেরিয়ে যেতে পারে বলে আওয়ামী লীগের ওই সূত্রগুলো জানায়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, জোটের অন্যান্য দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সবে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হলো। এখন যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় রয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এগুলো চলবে। এরপর চিন্তাভাবনা করা হবে। আমরা এখনো জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেইনি।

 

জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো আসন সমঝোতা হবে কি না জানতে চাইলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, জাতীয় পার্টির ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে, সে ব্যাপারেও কোনো চিন্তা ভাবনা এখনো করা হয়নি। বিষয়টি আরও পরে ভাবা হবে।