ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী গানের মিছিল

জাবি প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১ অগাস্ট ২০২৪ ০৮:১২:০০ অপরাহ্ন | শিক্ষা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ন্যাক্কারজনক হামলা এবং কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী গণহত্যা, গণগ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে প্রতিবাদী গানের মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১২ জন শিক্ষক অংশ নেন।
 
বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি প্রতিবাদী গানের মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরানো ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্বরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। পরে সেখানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে সেখান থেকে পুনরায় মিছিলটি একই পথে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
 
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেফতারকৃত সকল শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়া বক্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
 
সমাবেশে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নাহিদ কায়সার সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা তাদের কিছু দাবি নিয়ে পথে নেমেছিলো। সংগত কিংবা অসংগত দাবি যাই হোক তাদের দাবিগুলো শোনার সময় দেওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমরা তাদের কথা কম শুনেছি। তাদের উপর অত্যন্ত অত্যাচার করা হয়েছে। আমি একজন শিক্ষক একজন অভিভাবক হিসেবে এই আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসেছি। আমি চাই শিক্ষার্থীরা ন্যায় পাক, তাদেরকে যারা হত্যাকারী তাদের বিচার হোক।
 
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামালউদ্দিন রুনু বলেন, আপনি এখনও মিথ্যা বলছেন, মিথ্যা বলতে বলতে আপনি সারা বিশ্বকে জানিয়েছেন আপনি একটা মিথ্যুক। আপনি যে কান্না করেন তাকে বিশ্ব মিডিয়া ‘ক্রোকোডাইল টিয়ারস’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আপনার লজ্জা থাকা উচিত।  
 
তিনি আরো বলেন, আমাদের ছাত্ররা যে পথ দেখিয়ে গেছে আমরা শিক্ষকরা সেই পথে হাটবো, আপামর জনতা হাটবো। আমরা মনে করি আমরা যে রাষ্ট্র নির্মাণে করতে চাই, আপনি সেই পথে বাধা হিসেবে উপনিত হয়েছেন।আপনার বিদায় ছাড়া এই দেশ আর শান্তি পাবে না। যতক্ষন না আমরা আপনাকে বিদায় করে ছাড়বো যতক্ষন পর্যন্ত আপনার হুস হবে না। লজ্জা থাকলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। আগামীতে যদি এভাবে জেলে নিতে থাকেন তাহলে আমরা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবো। প্রয়োজনে জেল ঘেরাও করবো । তবুও আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে কুন্ঠিত হবো না।
 
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, সরকার এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যে ত্রাস এবং ভয়ের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের মানুষ ছাত্র-জনতা সেই ভয়কে জয় করেছে। তারা এখন বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে জানে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ঢাকায় সেতু ভবনের নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অথচ ঘটনার দিন সে ক্যাম্পাসেই ছিলো। সারাদেশে মিথ্যা মামলা দিয়ে নানা ধরনের ট্যাগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের যেভাবে গ্রেপ্তার, জুলুম করা হচ্ছে আমরার সেটির তীব্র নিন্দা জানাই। সবাই আজ জেগে উঠেছে, ভয় সন্ত্রাসকে জয় করে এই গণঅভ্যুত্থান নিশ্চয়ই জুলুমবাজ সরকারের পতন ঘটাবে।
 
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, পুরো বাংলাদেশ আজ শিক্ষাঙ্গন। সবাই সরকারের চাল বুঝে গিয়েছে “দিনে নাটক, রাতে আটক” খেলা খেলছে তারা। জাবি’র যে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে আমরা তাদের মুক্তি চাই। আর না হলে যেখানে তাদের আটকে রাখা হয়েছে আমরা সেখানে আসবো, এর জন্য যে সমস্যা হবে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
 
জাবি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয় আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, যৌক্তিক ও নায্য দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল (বুধবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েলর দুইজন শিক্ষিকাকে পুলিশ লাঞ্ছিত করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বাসভবনে বোমা হামলা হয়েছে। বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসকল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
 
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক আহসান লাবিবের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. শওকত হোসেন, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান প্রমুখ।