রাঙামাটিতে টানা ২ দিনের বৃষ্টিতে আবারও জেলায় পাহাড় ধস ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বুধবার থেকে মৌসুমী প্রভাবে জেলায় হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগে এবছর ঘূর্ণিঝড় রিমেল ও মৌসুমী প্রভাবে সৃষ্ট মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো ২ ধাপে প্লাবিত হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হন হাজার হাজার মানুষ। এদিকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল থেকে সারা দিন রাঙামাটিতে সূর্যের দেখা মেলেনি। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থেকে দিনভর হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে জনমনে তৈরি হয়েছে পাহাড় ধস ও বন্যার শঙ্কা। সম্ভাব্য যে কোনো দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সময় প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আসমা জানান, জেলা সদরের পৌরসভা এলাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে ৩১টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে শহরের রিজার্ভ বাজারে চেঙ্গিমুখ, চম্পানি মা টিলা, শহিদ আবদুল আলী একাডেমি বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা, পুলিশ সুপার কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা, গর্জনতলী, ভেদভেদী নতুনপাড়া, শিমুলতলী, রূপনগর, যুব উন্নয়ন এলাকা অন্যতম। ওইসব এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা ১৩৬৬। তাদের মধ্যে রয়েছে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে ১৭টি, ২নং ওয়ার্ডে ৫০টি, ৩নং ওয়ার্ডে ৩১৯টি, ৪নং ওয়ার্ডে ১৮টি, ৫নং ওয়ার্ডে ২৫টি, ৬নং ওয়ার্ডে ৫৪০টি, ৭নং ওয়ার্ডে ২৩৮টি, ৮নং ওয়ার্ডে ৪৪টি এবং ৯নং ওয়ার্ডে ২১৪টি পরিবার।এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করা লোকজনের নিরাপত্তায় পৌরসভায় মোট ২৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে।
এদিকে বুধবার থেকে মাঝারি ও ভারী বর্ষণে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাস্থ কাচালং নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে যেকোন সময় নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগে বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রথম ধাপে গত ২৮ মে পাহাড়ি ঢলে ৮টির অধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। এবং দ্বিতীয় ধাপে গত ২৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সাপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদসহ ওই এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়। যেখানে উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার পরিবার বন্যায় কবলিত হয়।
জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সব সময় প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি রয়েছে। পাহাড় ধসসহ সম্ভাব্য যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা দেখা দিলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ জেলা, উপজেলার সব বিভাগ ও সংস্থাকে প্রস্তুত থাকতে বলে দেওয়া আছে। এ ব্যাপারে উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, বৃষ্টি হলে শহর এলাকাসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করা লোকজনকে আগেভাগে নিরাপদে বা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে সতর্ক করে দেওয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনের নিরাপত্তায় শহর এলাকাসহ জেলায় মোট ২৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা আছে। তার মধ্যে রয়েছে রাঙামাটি পৌরসভায় ২৩টি এবং রাঙামাটি সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ৯টি করে ৫৪টি আশ্রয় কেন্দ্র। অন্য আশ্রয় কেন্দ্রগুলো অপর ৯টি উপজেলার সদরসহ ইউনিয়ন ভিত্তিক খোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের জুন মাসে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরবর্তী ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড়ধসে ২ শিশুসহ ফের ১১ জনের এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে আরও তিন জনের প্রাণহানি ঘটেছিল।