পার্থিব জীবনকে সাজিয়ে তোলা ও জীবনের সুখ ভোগ করার জন্য মানুষ সম্পদ উপার্জন ও সঞ্চয় করে। কিন্তু মহান আল্লাহ সকলকে একই রকম সামর্থ্য প্রদান করেন না। যার ফলে কারো কাছে সঞ্চিত হতে থাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিপুল সম্পদ। আবার কারো হাতে থাকে না প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজন পূরণের মতো যত্সামান্য সম্পদও। আর ঠিক এ ক্ষেত্রেই প্রকৃত দয়াদ্র মানুষগুলো এগিয়ে আসেন অন্যের কল্যাণে। নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ বিলিয়ে দেন মানুষের প্রয়োজনে। আমরা এটাকেই বলি দান বা সদকা।
দান করলে ধন কমে না, বরং বাড়ে। বিষয়টি বাহ্যিক দৃষ্টিতে স্বাভাবিকতাবিরোধী মনে হলেও এ স্বাভাবিকতাবিরোধী বিষয়টিই কোরআন দ্বারা প্রমাণিত বাস্তবতা। কোরআনুল কারিম বলছে—‘শয়তান তোমাদের দরিদ্রতার ভয় দেখায় ও কৃপণতার আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদের তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার কথা দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৮)
কোরআন সতর্ক করছে যে তোমরা যখন দান করতে চাও, তখন শয়তান তোমাদের অভাবের ভয় দেখিয়ে দান থেকে বিরত রেখে দানের অফুরন্ত সওয়াব থেকে বঞ্চিত রাখতে চয়। এখানে আল্লাহ আমাদের শয়তানের এ ফাঁদের কথা প্রকাশ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নিজে দয়া করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। আল্লাহর দয়ার প্রতি যার অবিচল আস্থা থাকবে তার কীসের দারিদ্রতা আর অভাবের ভয়?
নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ কেউ কাউকে দান করলে তিনি দুটি পুরস্কার পাবেন। এক. পরকালে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। দুই. দুনিয়াতে তার প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন। অর্থাত্ তার সম্পদ আরও বাড়িয়ে দিবেন।
দানের দ্বিতীয় পুরস্কার হচ্ছে, যে দান করবে, আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দিবেন। শুধু পরকালের পুরস্কারই নয়, দুনিয়ার জীবনেও সমৃদ্ধি দিবেন। পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে—‘তুমি বলো, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন, (যাকে ইচ্ছা) কমিয়ে দেন। আর তোমরা যা কিছুই দান করো, তিনি তার জায়গায় অন্য কিছু দিয়ে দেন। আর তিনিই তো শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ৩৯)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো দানই সম্পদে ঘাটতি সৃষ্টি করে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৮)
দানের আরেকটি দিক হলো, দান মানুষকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে। দান আল্লাহর ক্রোধ দমিয়ে দেয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং মন্দ মৃত্যু ঠেকিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৪)
মানুষ যখন পাপ করে, আল্লাহ এতে অসন্তুষ্ট হন। সে অসন্তুষ্টি দূর করার সহজ উপায় হচ্ছে দান করা। আল্লাহর অসন্তুষ্টি যদি দূর হয় আর তিনি যদি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে আমাদের জীবন হবে নিরাপদ ও শান্তিময়।
দানের অন্য এক উপকার হচ্ছে আল্লাহর সাহায্য লাভ। বিপদদাপদে আল্লাহর সাহায্যই আমাদের একমাত্র ভরসা। সর্বত্র তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। যে মহান আল্লাহর সাহায্যই আমাদের একমাত্র ভরসা সে সাহায্য পাওয়ার সহজতম পথ হচ্ছে দান করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ নিজ ভাইয়ের সহযোগিতা করে, ততক্ষণ আল্লাহও তাকে সহযোগিতা করেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)
আসুন, সামর্থ্য অনুযায়ী দানের হাত প্রসারিত করি।
লেখক : প্রবন্ধিক ও অনুবাদক