ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ই মাঘ ১৪৩১

সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ: রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি, যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

আহমেদ শাহেদ | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ ০৪:১৫:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা সারাদেশে কর্মবিরতি পালন করছেন, যার ফলে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের ট্রেন চলাচল। এই পরিস্থিতি সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে হতাশ হয়ে বসে আছেন। কেউ জানেন না কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনসহ দেশের বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় জমেছে। যাত্রীরা অনেকে ট্রেনের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছেন, আবার কেউ কেউ বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার খোঁজ করছেন।

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য আসা যাত্রী রায়হান কবির জানান, আমি জরুরি কাজে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় এখন কী করব বুঝতে পারছি না। বাসের টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না।

রেলওয়ের রানিং স্টাফরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন কাঠামো, ওভারটাইম ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে তাদের অভিযোগ, রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে তারা কর্মবিরতিতে গেছেন।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। বৈঠকে রানিং স্টাফদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। তবে দাবি পূরণে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় রানিং স্টাফরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।

বৈঠকের পর রানিং স্টাফদের একজন প্রতিনিধি জানান, আমরা বারবার বলার পরও আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়নি। তাই আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রানিং স্টাফদের দাবিগুলো নিয়ে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, আমরা তাদের দাবিগুলো শুনেছি এবং সেগুলো নিয়ে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।”

যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রী শিরিন আক্তার বলেন, “আমি শিশু নিয়ে যশোরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় এখন বিপাকে পড়েছি। কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও পাচ্ছি না।”

বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহনেও যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। এর ফলে ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। সড়কপথে একাধিক বাস কাউন্টারে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহী রুটে টিকিট পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

রেলওয়ের রানিং স্টাফ এবং মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকলেও, কবে নাগাদ এ কর্মবিরতি শেষ হবে তা অনিশ্চিত। সাধারণ যাত্রীরা দ্রুত সমস্যার সমাধান আশা করছেন।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা এ সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রানিং স্টাফদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে জনসাধারণের ভোগান্তি কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

বায়ান্ন/এএস/একে