ঢাকা, বুধবার ১ মে ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১

নগরীর মুল সড়ক দখল করে যত্রতত্র ভাসমান বাজার বসায় জনভোগান্তি ও যানজট চরমে

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১২:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
  • কোন ভাবেই সড়কের দখল মুক্ত হচ্ছেনা
  • চাঁদা পেলে বন্ধ চসিক ও প্রশাসনের ইদুর দৌড় খেলা

প্রতিদিনই নগরীর কোটি কোটি টাকায় নির্মিত সড়ক ভাসমান হকারদের দখলে চলে যাচ্ছে। নগর হারাচ্ছে তার সৌান্দর্য। নাগরিকরা ঝুকি মাথায় নিয়ে চলতে হচ্ছে। মুল সড়কের রাস্তাগুলো ডানে বামে সরু হয়ে যাচ্ছে। যাত্রি, পথচারী ও গাড়ির ড্রাইভাররা যেন অসহায়। কোনভাবে এদিক সেদিক করে গাড়ি গুলো চলছে। ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠছে নগরীর রাস্তাঘাট। দীর্ঘ যানজট ও চরম ভোগান্তিতে চলছে চট্টগ্রামের নাগরিকরা। ভাসমান হকারদের নেই কোন নিয়মনীতি । যখন তখন যেখানে সেখানে তারা ইচ্ছেমতো তাদের দোকান বসায়। যেন এক ড্যামকেয়ার ভাব। নগরীর মুল সড়ক দখল করলেও ভয় ডরের লেশমাত্র নেই। যে যার মতো করে দোকান বসাতে পারায় নগরীতে হকারের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে। 

নগর ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রামে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কালুরঘাট যেতে মুল সড়কেই কাজীর হাট বাজারের বিশাল চিত্র । তবে বাজারটির বিস্তুৃতি জানালিহাট ষ্টেশনের রেলরাস্তাাসহ কালুরঘাট সড়কের ফুটপাত ও সড়কের বিশাল অংশ জুড়ে। বাজারটি তার অংশ ছাড়াও দিন দিন এত বড় হচ্ছেযে, পিছনের অংশ জানালীহাট ষ্টেশনের রেল রাস্তাা, সামনে কালুরঘাট সড়কের অংশ। রাস্তা দখল করে সাজানো তরিতরকারী, ফল ও ফুড কর্নারের অসংখ্য ভাসমান দোকান। সব মিলে একটি জমজমাট কাঁচাবাজার। মনে হতে পারে এটা কোনো স্থায়ী বাজারের চিত্র। বাজারটি সারাক্ষণই ক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব। ফলে পথচারী ও যাত্রিদের হাঁটাচলার জায়গা নেই বললেই চলে। সড়কের ওপর মালামাল থাকায় যাত্রি এবং পরিবহন চলাচলে দুর্ঘটনার হুমকির মুখে পড়তে হয়। অনেক সময় ভীড় এড়িয়ে হেটে চলাও দায় হয়ে পড়ে। প্রতিদিনই দুএকটা দুর্ঘটনার স্বিকার হয়ে আহত হচ্ছে পথচারী। গুরুত্বপূর্ন সড়কের উপর বাজারটি প্র্রতিদিন বসলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে নেই কোন জোড়ালো তদারকি। জানা যায়, বাজারটি সিটি কর্পোরেশন থেকে ইজারা নেয়া হয়েছে। যাত্রি বা পরিবহনের নিরাপত্তার চেয়ে দোকানের নিরাপত্তা দিতেই যেন পুলিশ ব্যাস্ত থাকে বলে পথচারী, যাত্রি, পরিবহন মালিকসহ ড্রাইভাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  প্রতিদিন কফিল নামে এক লোক প্রতিটি দোকান থেকে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা চাঁদার টাকা তোলেন। উত্তোলিত বিশাল অংকের টাকা পুলিশ ও কাউন্সিলরের লোকসহ স্থানীয় নেতা কর্মিদের ভাগ দেন।  এ বিষয়ে কফিল উদ্দিন বলেন, এই বাজারের ইজারাদার হলেন নুর মোহাম্মদ। উনি সিটি কর্পোরেশন থেকে কোটি টাকার বিনিময়ে ইজারা নিয়েছেন। আপনি উনার সাথে কথা বলেন। বাজার ইজারাদার নুর মোহাম্মদ এর মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বায়েজিদের বাংলাবাজার সড়কের উপর অবৈধভাবে বসানো ভ্যানগাড়ির বাজার। চলাচলের যানবাহনের জ্যাম, জনসাধারণ, ছাত্রছাত্রিরা নিরাপত্তায় বাসায় ফেরা, ইন্ডাষ্ট্রীর লোড আনলোডের গাড়িগুলোর নির্বিঘ্নে আসা যাওয়া, রোগীরা সময়েই জ্যাম পেরিয়ে কাঙ্খিত স্থানে যাওয়া চরম ভোগান্তি হলেও স্থায়ী সমাধান করছেননা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। পুলিশ আসলে এরা ভ্যানগাড়ি নিয়ে ঝুকি নিয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে, ৫ থেকে ১০ মিনিট পর তারা চলে গেলে তারা আবার ফিরে আসে। পুলিশ ও অবৈধ দোকানিদের এই ইদুর দৌড় চলে পুরো সপ্তাহ ও মাসজুড়ে। সোর্স মানিক জেল থেকে বেরিয়ে পুনরায় টাকা তুলছে। মানিকই পুলিশসহ এলাকার নেতাকর্মি ম্যানেজ করে। বর্তমানে পুরো বাজারটা নিয়ন্ত্রন করেন সোর্স মানিক। এলাকার জনগণ শত অসুবিধা সত্বেও জিম্মি হয়ে আছে এই বাজারের দোকানীদের কাছে। কোন নিরাপত্তা নেই এই এলাকার অধিবাসীদের। বিকাল হলে এই সড়কে হাটা যেন বড় দায়। তবু সব সহ্য করতে  হচ্ছে নগরের এই এলাকার নাগরিকদের।

নগরীর আরেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো ষোলশহর ২নং গেইট এলাকা। এখানে পথচারী হয়ে হাটা অনেক কষ্ট । উভয় পাশের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ভ্যানগাড়ির ভাসমান বাজার। নিয়ন্ত্রনে নেই কেউ। ২নং রেল লেভেল ক্রসিংএর গেইটঘরের সামনে , বেরিয়ারের সামনে কোন জায়গাই খালি নেই। ফুটপাত দিয়ে হাটা প্রায় অসম্ভব। রেলরাস্তায় লাগানো মাছের দোকান থেকে তরিতরকারির দোকান কোনটাই বাদ নেই। কারা চালায় এসব। জানা যায়, রেলে কর্মকর্তা, ষ্টেশনমাষ্টার, গেইটঘরের গেইটম্যানরা উত্তোলিত চাঁদার একটা ভাগ নেয়। মেয়রগল্লি থেকে রেলরাস্তা পর্যন্ত টাকা তোলে শরীফ মোল্লা। তার বিরুদ্ধে অনেক দোকানীর অভিযোগ। চাঁদার টাকা না দিলে সে দোকানীদের মালামাল পেলে দেয়। দিনের বেলার হকারদের থেকে নেয় ১৫০টাকা করে, রাতের বেলার হকার মাছ বেপারীদের থেকে তুলে ২০০ টাকা করে। জানা যায়, শরীফ মোল্লার নিজের ভাসমান দোকানই ৬টা। সে কারু বাধা না মেনে রেলের বেরিয়ারের উভয় পাশ দখল করে আছে। তার অত্যাচারে অনেক দোকানী কোন কথাই বলতে পারেনা। মুল সড়ক যেন তার আধিপত্যর জায়গা। অন্যদিকে রেলরাস্তার পাশঘেসে দোকানীদের থেকে মনির নামে একজন মাছ ব্যবসায়ী চাঁদার টাকা তুলে। সে প্রতি দোকান থেকে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা তুলে। সেই টাকা এমপির লোক পরিচয়ধারী নেতাদের হাতে তুলে দেয় বলে জানায়। সেই নেতা এই টাকা দিয়ে প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেন বলে জানান। সরেজমিনে আরো জানা যাায়, অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ ও অক্সিজেন সড়ক জুড়ে গড়ে উঠছে ভ্যানগাড়ির বাজার। জনবহুল স্থান হলেও এসব জ্যাম ঠেলেই প্রতিদিন নগরবাসীকে চলতে হয়। কাউকে যেন কিছু বলার নেই। জিইসির মোর নগরীর অন্যতম জায়গা হলেও ভাসমান হকাররা ফুটপাত সহ মুলসড়কে চলে আসে। প্রতিদিন তারাও চাঁদা দেয়। এইভাবে ভাসমান বাজারের দখলের কবলে চট্টগ্রাম নগরী। দিন দিন তার সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যা্েচছ। নগরবাসী সমস্যা এড়াতে কাউকে কিছুই বলতে পারছেনা। ভরসা করতে পারছেনা সিটি কর্পোরেশনের কর্তা ব্যাক্তিদের উপর , সেই সাথে ভরসা করতে পারছেনা প্রশাসনের উপর। এই নগরী ট্যাক্সের টাকায় চলে। নগরীর সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করার দায়িত্বে যারা আছেন তারাই যদি এসব ব্যাপারে ছাড় দেন তবে নগরের নাগরিকরা যাবে কোথায়? যানজট ও জনভোগান্তি থেকে মুক্তি চান নগরের সাধারণ মানুষগুলো। একটি সুন্দর নগরী প্রত্যাশা করেন সবাই।