ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

নাহিদার অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ভারতকে জিততে দেয়নি বাংলাদেশ, সিরিজ ড্র

ক্রীড়া ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : শনিবার ২২ জুলাই ২০২৩ ০৬:৪৫:০০ অপরাহ্ন | খেলাধুলা

প্রথম ওয়ানডেতে জিতলেও দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি রূপ নেয় সিরিজ নির্ধারণীতে। শনিবার মিরপুরে টস জিতে ব্যাট করতে নামা স্বাগতিকদের সেই ব্যাটিংয়ের বিজ্ঞাপন হয়ে থাকলেন ফারজানা হক পিংকি। তার অনবদ্য সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ২২৬ রানের লক্ষ্য দেয় সফরকারী ভারতকে। মিরপুরের উইকেটে কঠিন এই লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভারতও দাপট দেখাচ্ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ দুর্দান্ত বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ভারতের সঙ্গে ম্যাচ টাই করে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ড্র করলো।

 

শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩ উইকেটে ১০ রান। তবে নাহিদা ৪৮তম ওভারে ১ রান খরচায় দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। বাকি এক উইকেট নিয়ে তখন জয়ের চেষ্টায় ভারত। সুলতানা খাতুন ৪৯তম ওভারে বেশ ভালোভাবেই চেপে ধরেছিলেন। কিন্তু মিড উইকেট দিয়ে দুই ফিল্ডারের মাঝ দিয়ে মেঘনা সিং বাউন্ডারি মারলে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয় বাংলাদেশের। 

 

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৩ রান প্রয়োজন হলেও প্রথম দুই বলে দুই রান নিয়ে সমতায় ফেরে ভারত। মারুফার তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে নিগারকে ক্যাচ দিয়ে মেঘনা বিদায় নিলে ম্যাচটি টাই হয়। সুপার ওভার না থাকায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-১ ব্যবধান নিষ্পত্তিতে শেষ হয়।

 

 

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ২২৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ২২৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে চাপ কমাতে আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাটিং করে ভারত। শুরুতে দুই টপ অর্ডার ব্যাটার শেফালি ভার্মা (৪) ও ইয়াস্তিকা ভাটিয়া (৫) ফিরেও গেলেও রান তোলার গতি কমেনি ভারতের। তৃতীয় উইকেটে হারলিন দেওল ও স্মৃতি মান্ধানা মিলে ১০৭ রানের জুটি করে শক্ত অবস্থানে তোলেন দলকে। ৮৫ বলে ৫৯ রান করে পয়েন্টে সোবহানা মোস্তারির দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেলেন স্মৃতি। 

 

স্মৃতি ফেরার পর অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর ও হারলিন দেওল মিলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। ২১ বলে ১৪ রান করে নাহিদার ফুল লেন্থ বল সুইপ করতে গিয়ে আউট হন অধিনায়ক। এভাবে আউট হয়ে বিরক্ত মুখেই মাঠ ছাড়তে হয় হারমনপ্রীতকে। অধিনায়ককে হারিয়েই মূলত খেই হারায় ভারত। মাঝে ৩৫তম ওভারে বৃষ্টি নামলে কিছুক্ষণের জন্য খেলা বন্ধও থাকে, তাতে কিছুটা হলেও মোমেন্টাম হারায় সফরকারীরা।

 

সুযোগটা বেশ ভালো করেই কাজে লাগান বাংলাদেশের বোলাররা। এক প্রান্ত আগলে রেখে জেমিমাহ রদ্রিগেজ জয়ের চেষ্টা করলেও সঙ্গীর অভাবে সেটি পারেননি। তিনি ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন হারলিন। ১০৮ বলে সাজানো ছিল তার ৭৭ রানের ইনিংসটি।

 

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে নাহিদা আক্তার ৩৭ রানে নেন তিনটি উইকেট। এছাড়া মারুফা আক্তার দুটি এবং সুলতানা খাতুন, রাবেয়া খাতুন ও ফাহিমা খাতুন নেন একটি করে উইকেট।

 

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। এদিন ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। আগের দুই ওয়ানডের ব্যাটিং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে শুরুটা দারুণ ছিল স্বাগতিকদের। ধীর গতির হলেও ওপেনিং জুটিতে ফারজানা-শামিমা মিলে ৯৩ রান যোগ করেছেন। পরে এই জুটিই দুইশ প্লাস রানের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। শামীমা হাফসেঞ্চুরির পর ৫২ রান করে আউট হয়েছেন। তার ৭৮ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার। তার পর ফারজানা ছিলেন ইনিংসের মূল চালিকা শক্তি। নিগারকে নিয়ে যোগ করেন ৭১ রান। অধিনায়ক নিগার ২৪ রানে ফিরলে রিতু মনি বিদায় নেন মাত্র ২ রানে। তখন আবার সোবহানা মোস্তারিকে নিয়ে ফারজানা ৫৬ রানের ইনিংসে দুইশ ছাড়ান দলের স্কোর। ইনিংসের শেষ বলে ফারজানা রান আউট হলে ২২৫ রানে থেমেছে স্বাগতিকদের স্কোর। ১০৭ রানে বিদায় নেওয়ার আগে ১৬০ বলে ৭টি চারে সাজানো ছিল ফারজানার ইনিংস। সোবহানা অপরাজিত ছিলেন ২৩ রানে। তার ২২ বলের ইনিংসে ছিল ২টি চার। 

 

বাংলাদেশের হয়ে মেয়েদের ক্রিকেটের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেছেন ফারজানা। ছেলেদের ক্রিকেটে যেমন মেহরাব হোসেন অপি ওয়ানডের প্রথম সেঞ্চুরিতে ইতিহাস গড়েছেন। ঠিক তেমনি ইতিহাসে নাম লেখালেন ফারজানা।  

 

স্বীকৃত ওয়ানডেতে এতদিন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরটি ছিল সালমা খাতুনের (৭৫*)। ২০১৩ সালে এই ভারতের বিপক্ষেই ইনিংসটি খেলেছিলেন। তাছাড়া ২০২১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে শারমিন আক্তার ১৩০* রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও সেটি স্বীকৃত ওয়ানডে ছিল না। সেটি লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

 

১৫৬ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। তার ব্যাটে ভর করেই ৪ উইকেটে ২২৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ দল। যা ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। পাকিস্তানের বিপক্ষে করা ২৩৪ রান সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ বাংলাদেশের।

 

ভারতের হয়ে ৪৫ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন স্নেহা রানা। ৪২ রানে একটি উইকেট দেবিকা বৈদ্যর।