বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে জায়েদ খানের করা রিটের বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানি আজ। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে একই বেঞ্চ এই রুলের ওপর শুনানির জন্যে দিন ঠিক করেন। সে হিসেবে শুনানির জন্য আজ মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য এবং বিষয়টি কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) নিপুণের আইনজীবীর সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন আদালত।
আদালতে ওইদিন নিপুণের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। জায়েদ খানের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ন, আহসানুল করিম ও নাহিদ সুলতানা যুথি।
পরে নিপুণের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, রিটে কিছু নথিপত্র সংযুক্ত করার জন্য নায়ক জায়েদ খানের পক্ষ থেকে এফিডেভিট আকারে জমা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো আমরা আজ মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় হাতে পেয়েছি। এসব নথি স্টাডি করার জন্য আদালতের কাছে সময় চাওয়া হয়। তখন আদালত এ রুলের শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার (আজ) ২২ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন। তারই ধারাবাহিতায় আজ রুলের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই পদ নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের ওপর চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ এবং স্থিতাবস্থা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রুল শুনানি করতে বলেন সর্বোচ্চ আদালত।
নির্বাচনের সময় ‘ভোট কেনার’ অভিযোগ তুলে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেন অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার। এমনকি এ পদে পুনরায় ভোটের দাবিও তোলেন তিনি। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জায়েদ খানের পদ বা প্রার্থিতা বাতিল হবে কী না- সে বিষয়ে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এফডিসিতে বসে শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ড। আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। তারই প্রেক্ষাপটে ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ডের প্রার্থিতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন জায়েদ খান। এর আগে জায়েদ খানের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি ও আদেশ দেন।
পরে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন নিপুণ। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে নিপুণের আবেদনটি ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে আদেশ দেন। একই সঙ্গে শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে ওই সময়ে দুই পক্ষকে (নিপুণ ও জায়েদ) স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ধার্য তারিখে (১৩ ফেব্রুয়ারি) লিভ টু আপিল করার কথা জানান নিপুণের আইনজীবী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি শুনানির জন্য ছিল।
এর পরের দিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে স্থিতাবস্থাও বহাল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে জারি করা রুল হাইকোর্টকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালত।
গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। পরে জায়েদের বিরুদ্ধে ‘টাকা দিয়ে ভোট কেনা’সহ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ আনেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ। পরে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই বিষয়টি ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে আসছেন জায়েদ খান।
এরই মধ্যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিএফডিসি প্রাঙ্গণে ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ আক্তারের নেতৃত্বে নতুন কমিটি শপথ নেয়। পরে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে নিজ নিজ পদের চেয়ারে বসেন তারা। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করেন সমিতির সদস্যরা।
এর পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি নিপুণ আকতারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করে আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন জায়েদ খান। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত ওইদিনই স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিপুণের আইনজীবী আবেদন করেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি ওই আপিলের শুনানি নিয়ে জায়েদের সাধারণ সম্পাদক পদ বাতিল করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। একই সঙ্গে আদেশে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেন চেম্বার বিচারপতি। এ সময়ের মধ্যে জায়েদ-নিপুণ কেউ সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে পারবেন না মর্মেও জানানো হয়।
আইনজীবীরা জানান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও স্থগিতই থাকছে। একই সঙ্গে শিল্পি সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে দুই পক্ষকে (নিপুণ আক্তার ও জায়েদ খান) স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির দেওয়া আদেশ চলমান থাকবে।
আদালত বলেছেন, দুই পক্ষ (জায়েদ ও নিপুণ) উপস্থাপন করেছেন যে হাইকোর্টে বিষয়টি (রুল শুনানি) মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ অবস্থায় আবেদনটি (নিপুণের করা) নিষ্পত্তি করা হলো। চেম্বার বিচারপতি যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা চলমান থাকবে।