২২শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরেই এই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে উপকারভোগীদের মাঝে।
ঘরে বসবাস করার আগেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচিত ভূমিহীন পরিবারগুলো। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব তারা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে বসবাস করতে চান।
“আশ্রয়নের অধিকার-শেখ হাসিনার উপহার” এই স্লোগান নিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ৪র্থ পর্যায়ে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ২৭টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে অধিকাংশ ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ঘরগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি বেড রুম, টয়লেট, রান্নাঘর, নামাজের জায়গা বা ধর্মীয় স্থান ও একটি বারান্দা। ঘর ও আশপাশের জমি মিলিয়ে দুই শতক জমি দেওয়া হবে উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারকে।লাল ও সবুজ টিনসেডের এই ঘরে একটি পরিবার স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারবে।
এই প্রকল্পের আওতায় নানিয়ারচর উপজেলায় ৪ ইউনিয়নে পাহাড়ি এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ২৭টি ঘর। লাল ও সবুজ টিন সেডের আধা পাকা ঘরগুলো একটি সৌন্দর্যের আধারে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া ভূমিহীন পরিবারের সন্তানদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আঙ্গিনা। তার পাশেই থাকবে প্রশস্ত রাস্তা। পাহাড়ের পাশে লাগাতে পারবে গাছ, সবুজ বেষ্টনীতে বসবাস করবেন হতদরিদ্র এই জনগণ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচিত ভূমিহীনদের মাঝে ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হবে। ইতোমধ্যে এই উপকারভোগীদের নামে জমির দলিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. সৈয়দা সাদিয়া নুরিয়া।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সাদিয়া নুরিয়া আরো বলেন, আমরা হতদরিদ্রদের জন্য প্রাপ্ত ঘর নির্মাণের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করেছি। ঘরগুলো নির্মাণ শেষ হয়েছে। ঘর প্রদানের ক্ষেত্রে উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমরা সঠিকভাবে যাচাইবাছাই করেছি। যারা আসল ভূমিহীন তারাই এই সুবিধার আওতায় এসেছেন। এই আশ্রয়ন প্রকল্পের ভূমিহীনদের জন্য , সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ, খোলা জায়গা, বৃক্ষরোপণ করে সবুজ বেষ্টনী তৈরিসহ সব ধরনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।২২শে মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালী সারাদেশের সাথে একযোগে ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন,এর আগে এ উপজেলায় ৭৩টি গৃহহীন ও অসহায় পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী ঘর দিয়েছিলেন,এবারে ২৭টি দেওয়া হচ্ছে সর্বমোট ১০০টি ঘর দেওয়া হল।
বুড়িঘাট ইউনিয়নের উপকারভোগী বিধবা চম্পা বেগম বলেন, কোনো জমিজমা না থাকায় স্বামীর মৃত্যুর পরে দুই সন্তান কে নিয়ে রাস্তার পাশে, বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে থাকতাম। আজ এ জায়গায়, কাল আরেক জায়গায় থাকতাম। বিভিন্ন সময় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে থাকার জন্য একটু জায়গা চেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এই ঘর পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি।
বগাছড়ি এলাকার উপকারভোগী মো.তোতা মিয়া বলেন, বয়স হয়েছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাস্তার পাশে থাকতাম। মাঝে মাঝে বিভিন্ন মানুষের দোকানের পেছনে শিয়াল কুকুরের মত থাকতাম। এখন একটি পাকা ঘর পেয়েছি। এরকম ঘরে বসবাস করব তা কখনও ভাবিনি।
ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের হরিকিশোর চাকমা বলেন, কোনোদিন ভাবিনি পাকা ঘরে বসবাস করব। প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে ঘর দিল এতে আমি খুব খুশি। দুই রুমের এই ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারব। বৃষ্টি আসলে এখন আর পলিথিন ঠিক করতে হবে না। না ঘুমিয়ে এক জায়গায় বসে থাকতে হবে না। একই ধরনের অনুভূতি ভূমিহীন বিধবা তপনা চাকমা ও সাগরিকা চাকমা।
ভূমিহীনরা ঘর পাওয়ায় খুশি স্থানীয়রাও।এদিকে রাঙ্গামাটি জেলাপরিষদ সদস্য ইলিপন চাকমা বলেন, নানিয়ারচরে যারা ঘর পেয়েছে, তাদের কোনো ঘর ছিল না। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে ও মানুষের বাড়িতে ছিন্নমূল হিসেবে বসবাস করতেন। তারা এখন শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। এই ভেবে আমরাও খুশি হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
ইউপি সদস্য মোস্তফা খান ও দিগন্ত চাকমা(মেম্বার) জানান, আমার এলাকায় যে আশ্রয়ন প্রকল্প হয়েছে তাতে আমরা খুব খুশি। বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে এলাকার ভূমিহীনরাও খুব খুশি। এই ঘরে তারা খুব শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।
নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন,আমাদের পার্বত্য এলাকায় ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এলাকায় আরও অনেক ভূমিহীন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি আরও কিছু ঘর বরাদ্দ দিতেন তাহলে, অন্য ভূমিহীনদেরকে দিতে পারতাম।