বিজু মূলত তিন দিন পালন করা হয়,ফুলবিজুর দিনে সকাল ও সন্ধ্যায় পাহাড়িদের ঘরে ঘরে জ্বালানো হয় মঙ্গলপ্রদীপ।
প্রত্যেক বছর উৎসবে প্রাণে প্রাণে তৈরি হয় উচ্ছ্বাসের বন্যা। সম্মিলন ঘটে পাহাড়ে বসবাসকারী সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের। এটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর তিন দিনব্যাপী প্রধান সামাজিক উৎসব।
উৎসবটিকে চাকমারা বিজু হিসেবে পালন করলেও মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসুক নামে পালন করে। এর প্রথম দিন চাকমারা ফুলবিজু, মারমারা পাইংছোয়াই, ত্রিপুরারা হারি বৈসুক, দ্বিতীয় দিন চাকমারা মুলবিজু, মারমারা সাংগ্রাইং আক্যা, ত্রিপুরারা বৈসুকমা এবং তৃতীয় দিন চাকমারা গোজ্যেপোজ্যে দিন, মারমারা সাংগ্রাই আপ্যাইং ও ত্রিপুরারা বিসিকাতাল নামে পালন করে থাকে ঘরে ঘরে। এটি পাহাড়ি জনগণের প্রাণের উৎসব।
পার্বত্য এলাকায় এদিনে ঘরের মহিলারা খুবই ব্যস্ত থাকে। ত্রিশ-চল্লিশ রকমের বা তার অধিক তরকারির সংমিশ্রণে পাঁচন রান্না করা হয়।
কাচা কাঠালের ইছোড়,শুটকি মাছের তরকারি,দেশি মুরগির ঝোল,কলাপাতার পিঠে,পায়েস,ফল- পানীয়,ঐতিহ্যবাহী খাবার অথিতিদের পরিবেশন ছাড়াও মাছ-মাংস আয়োজন করা হয়ে থাকে। ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে থাকে বিন্নি ধানের খই,পোলাও বিরানি,লুডুস, নাড়ু,সেমাইয়ের পাশাপাশি হরেক রকমের ঐতিহ্যবাহী খাবার।
পাহাড়ের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সকলে দলবলে মেয়েরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায় এবং আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফানুস উঠানো,বাড়িঘরের দরজায়, উঠানে, গো-শালায় প্রদীপ জ্বালিয়ে সকলের জন্য কেয়াংএ কেয়াংএ মঙ্গল কামনা করা হয়।
এছাড়া বিজু উৎসবে পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে ভাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয়,প্রত্যেক বছর এ উৎসবকে ঘিরে ,তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ব্যাপক কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। এসব বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্যে থাকে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, গ্রামীণ পালাগান, পাজন ও পিঠা উৎসব, নিজস্ব সংস্কৃতির প্রদর্শনী, নাট্যমঞ্চ, চলচ্চিত্র ও সাময়িকী প্রকাশনা।