ফেনীতে একজন সহকারী শিক্ষক প্রাথমিক পর্যায়ে ও মাধ্যমিক পর্যায়ে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই সাথে একই সময়ে শিক্ষকতা করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের হকদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সুন্দরপুর শফিকুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে ফেনী সদর উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগের বিষয়টি তদন্তে ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসাররা অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। দায়িত্ব দেওয়ার একমাস পার হলেও ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এমনকি প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানেন ও না ওই শিক্ষক কে?
তথ্য সংগ্রহ করতে এ প্রতিবেদক শিক্ষা অফিসে গেলে শিক্ষা অফিসাররা প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ উঠা শিক্ষকের নাম ও অন্যান্য তথ্য জানতে চান। এ ছাড়া ও নিউজের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের জানাতে বললেন দায়িত্ব প্রাপ্ত দুই কর্মকর্তাই। এ দিকে এ প্রতিবেদক প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস সহ বিভিন্ন দপ্তরে গেলে টনকনড়ে উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের। তাঁরা রোববার ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের হকদি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষকদের শিক্ষা অফিসে তলব করে শিক্ষকদের প্রাথমিক বক্তব্য নেয়া হয়েছে বলে জানান, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইফতেখার হোসেন পাভেল নামে একজন সরকারী শিক্ষক ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের হকদি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বিগত ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের এক তারিখ থেকে তিনি একই সাথে ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের সুন্দরপুর এসআর উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষক হিসেবে এনটিআরসি থেকে নিয়োগ পেয়ে চাকরি করছেন।
একই সময় তিনি হকদি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলে ও নিয়মিত বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর দেখা যায় এবং বেতন-ভাতাও ভোগ করেন। দুই মাস সুন্দরপুর শফিকুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সেখান থেকে পদত্যাগ করেন ঐ শিক্ষক এবং ফিরে যান পূর্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হকদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরই মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এমপি ও ভুক্তিও পেয়ে যান তিনি। একইভাবে গত ২০২০ সালে তিনি সোনাগাজী আমিরাবাদ আনোয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তিন মাস চাকুরী করেন।
অভিযোগ ওঠা শিক্ষক ইফতেখার হোসেন পাভেল একই সাথে একই সময়ে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিভাবে চাকুরী করলেন এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। স্কুলের কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভের সাথে বলেন, একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নীতি- নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি নিজেই অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হওয়া কোন ভাবেই কাম্য নয়। তারা বিষয়টি তদন্ত পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। শিক্ষক ইফতেখার হোসেন পাভেল দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই সময়ে দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি সুন্দরপুর এসআর উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই মাস চাকুরী করলেও কোন বেতন পাননি বলে জানান। হকদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও কিভাবে নিয়মিত বেতন পেলেন তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ওই শিক্ষক। সুন্দরপুর এসআর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন তাঁর বিদ্যালয়ে ইতিপূর্বে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষক ইফতেখার হোসেন পাভেল’র এমপিও বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানান।
হকদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন ও সভাপতি মাইন উদ্দিন পাটোয়ারী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, সহকারী শিক্ষক ইফতেখার হোসেন পাভেল’র চাচার মৃত্যুজনিত কারণে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন, এটা ছাড়া নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন তিনি। তবে সুন্দরপুর শফিকুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন ও হকদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন উভয় বলেছেন সহকারী শিক্ষক ইফতেখার হোসেন পাভেল দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই একই সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তা হলে প্রশ্ন দেখা দেয় কোন প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য সঠিক? নাকি প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করছেন তারা। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা ক্লাস্টার ভিত্তিক শিক্ষক হাজিরা সহ বিভিন্ন বিষয়ে তদারকি করার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফেনী সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগম ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তারা উল্টো এ প্রতিবেদকের কাছে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। বিস্তারিত জানানো হলে তারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন শিক্ষক একই সময়ে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু অবগত হয়েছি, অবশ্যই তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, একজন শিক্ষক একই সময়ে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অবহিত হয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসারদের বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।