ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাঁশখালীতে বেগম রোকেয়া স্বর্ণপদকের নামে জামাত নেতার প্রতারণা

শফকত হোসাইন চাটগামী, বাঁশখালী : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২ অগাস্ট ২০২৪ ০৯:৪৮:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাঁশখালীতে বেগম রোকেয়া স্বর্ণ পদক ও গুনীজন সংবর্ধনার নামে জামাত নেতা জহির উদ্দিন মজুমদারের প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৩ আগস্ট) বাঁশখালীর চাম্বলের একটি কমিউনিটি সেন্টারে দেশে জরুরী অবস্থা তথা কারফিউর মাঝেও এই আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বাঁশখালী থানার ওসিসহ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের নামে অতিথি করে ব্যানার ও দাওয়াতনামা করা হয়েছে।

বি়ভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে স্বর্ণ পদক দেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে একটি ক্রেষ্ট ধরিয়ে দেন অতিথিদের। তাছাড়া প্রতি বছর বেগম রোকেয়ার ছবি ব্যবহার করে তার নামে বৃত্তি পরীক্ষা, গুনীজন সংবর্ধনা ও স্বর্ণ পদক দেয়ার কথা বলে দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। তার আয়োজনের বৈধতা দিতে আমন্ত্রণ করেন জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, পুলিশ কর্মকর্তা, শিক্ষক ও রাজনীতিবীদসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। সমাজের ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে পদক দেয়ার নামে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত নামে এই বৃত্তি ও গুনীজন সংবর্ধান আয়োজন হলেও নেয়া হয়নি বেগম রোকেয়া পরিবারের অনুমতিও। জহির উদ্দিন মজুমদার বাঁশখালীর কাথরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং গুনাগরী বড় বাজার নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। বাঁশখালীতে জামাত শিবিরের অর্থ জোগানদাতাদের মধ্যে এই জহির উদ্দিন মজুমদার অন্যতম বলে জানা গেছে।

অনুষ্ঠান সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে কয়েকজনকে সংবর্ধনা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সেখানে পেকুয়ার এক ব্যক্তিকে সাংবাদিক হিসেবে লেখাহলেও বাস্তবে তিনি মাদক ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। তাছাড়া বাঁশখালীর একজনের নাম সংবর্ধিতদের তালিকায় রাখা হলেও ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের নামে বরাদ্দ আত্মসাৎ এমনকি প্রেসক্লাবের চেয়ার টেবিল বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

চেয়ারম্যান হিসেবে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে বাঁশখালীর পুকুরিয়ার বহুল আলোচিত বিতর্কিত চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দীনকে। তাছাড়া দুদকের মামলার আসামী গত পরশু নিজ ও স্ত্রীর নামে ৩৭টি দলিলের সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ পাওয়া সেই বিতর্কিত চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীকে করা হয়েছে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি। গত বছরও এই জহির উদ্দিন অনুমোদন বিহীন ফেসবুক পেইজের এডমিন কয়েকজন জামাত শিবির কর্মীকে সাংবাদিক বানিয়ে সংবর্ধনা দেন।

এব্যাপারে অভিযুক্ত জহির উদ্দিন মজুমদার স্বর্ণপদকে স্বর্ণ না দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন আসলে গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট বলা হলেও সেখানেও স্বর্ণ বা গোল্ড দেন না।জামাতের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নেই দাবী করে জহির উদ্দিন মজুমদার জানান বেগম রোকেয়া পরিবারের অনুমতির বিষয়টি তার মাথায় ছিলনা।

অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে এসএম শোয়াইবুর রহমানকে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, উক্ত অনুষ্ঠান ও আয়োজনের সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তার হোয়াটসঅ্যাপে ব্যানার পাঠানো হলেও তিনি উক্ত অনুষ্ঠানে যাবেন না বলে মন্তব্য করেন।

বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমদ জানান, এই ধরণের কোন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের অনুমতি নেননি। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, আমাকে অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে দাওয়াত করেছে। সেখানে সরকারী বেসরকারি কর্মকর্তা সাংবাদিক জনপ্রতিনিধিসহ সবাই থাকবেন বলেছে। আমি এর বেশি কিছু জানিনা।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার জানান, আমি ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। প্রোগ্রামটি বন্ধ করে বলা হয়েছে।