দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে কারাগারের পরিবর্তে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার মুক্তির পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠনোর আলটিমেটাম দিয়েছে বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে বিএনপির ‘পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডবাজি’ করছে উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারা খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে সত্যিকার অর্থে আন্তরিক হলে আইনি প্রক্রিয়ায় আসতে হবে, নির্বাহী আদেশে সম্ভব নয়।
রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্ত। তিনি কারাভোগ করে আসছেন। অসুস্থতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মানবিক কারণেই তাকে কারাগারের বদলে নিজ বাসায় থেকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি তিনি নির্বাহী আদেশে করেছেন। এখন একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি তো নির্বাহী আদেশে সম্ভব নয়, দেশের প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। এটি নিয়ে বিএনপির মতো একটি বড় ও দায়িত্বশীল দলের কাছ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে স্ট্যান্ডবাজি জাতি আশা করে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, বিএনপির আলটিমেটাম বহুবার বহুভাবে শুনেছি আমরা। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিষয়টি মানবিক। বিএনপি তার উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে সত্যিকার অর্থে আন্তরিক হলে দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে আইনের ধারায় যে সুযোগ পেতে পারেন, তা গ্রহণ করতে হবে। তা না করে তারা রাজপথে আলটিমেটাম দিচ্ছে। তাতে বোঝা যায়, বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নয়, রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে।
বয়োবৃদ্ধ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করলে তাতে চিকিৎসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উল্লেখ করে আব্দুর রহমান বলেন, বিএনপি দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে এই বাস্তবতা বুঝবে বলে আমরা আশা করি। তাদের কাছ থেকে এমন একটি মানবিক বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাওয়া জাতি আশা করে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় কোনও বাধা দেওয়া হয়নি বরং উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকার পরও নির্বাহী আদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাসায় থেকে নিজের পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন বিএনপির কাছ থেকে বিষয়টি নিয়ে আলটিমেটাম জনগণ প্রত্যাশা করে না।
খালেদা জিয়ার সুস্থতা আওয়ামী লীগ আন্তরিকতাভাবে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) সুস্থ হয়ে উঠুন। সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মানবিক দিক বিবেচনা করে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন বিএনপি তাতে সন্তুষ্ট না হলে তারা আইনি প্রক্রিয়ায় আসতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি পলিটিক্যাল স্টান্টবাজি করছে। একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিদেশে উন্নত চিকিৎসা চাইলেই তো হবে না। এটি আইন-আদালতের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী আদেশ ব্যবহার করে তাকে কারাগারের বাইরে বাসায় থেকে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন বিএনপি তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে চাইলে আইনি প্রক্রিয়ায় আসতে হবে।
সরকার মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি দিয়ে দিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তো খালাস পাননি। এখন তাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে পরে সাজাপ্রাপ্ত অন্যরাও তো এই সুযোগ চাইতে পারেন। এটা তো রাজনৈতিক ব্যাপার নয়, আইনি বিষয়।
খালেদা জিয়া রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে গিয়ে রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিএনপির সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে আলটিমেটাম দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। এত অসুস্থ যে এখন তার চিকিৎসকরা বলেছেন অবিলম্বে যদি তার চিকিৎসা না করা হয় বিদেশে, বাংলাদেশে তার সেই চিকিৎসা সম্ভব নয়। তা না হলে তাকে বাঁচানো দুষ্কর হয়ে যাবে। আমি যখন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে গেছি, তখন তারা বলেছেন, আপনাদের যদি কিছু করার থাকে তাহলে করেন, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।’
এরপর এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতারা বরাবরের মতো খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ‘রাজনীতি করার অপচেষ্টা’ করছে।
কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদার মানবিকতার কারণে খালেদা জিয়া একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও নিজ বাসায় বসবাস করছেন এবং নিজের পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারছেন। এ কারণে বিএনপি নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু বিএনপি তা না করে মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। একই সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে আইনবিরোধী কথাবার্তা বলছে।’