ঢাকা, মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ই আশ্বিন ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাগলা কুকুরের কামড়ে শতাধিক আহত

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১২ জানুয়ারী ২০২২ ০৭:০৩:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

একটি পাগলা কুকুরের বেপরোয়া দাপট। শিশু থেকে বৃদ্ধ, কেউই পায়নি রেহাই। সকাল থেকে দুপুর নাগাদ বিনা উসকানিতে কামড়িয়েছে অন্তত শতাধিক মানুষকে। প্রথম ঘটনাস্থলের আশপাশের চার-পাঁচটি মহল্লার মানুষের মাঝে ছড়ায় কুকুরাতঙ্ক। প্রাথমিক চিকিৎসা, জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন গ্রহণে হাসপাতালে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আহতেরা। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদেরকে। অবশেষে স্থানীয় জনতা মিলে পিটিয়ে মেরে ফেলে ওই পাগলা কুকুরটিকে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের দক্ষিণ পৈরতলা বাসস্ট্যাণ্ড এলাকায় ঘটনার প্রথম সূত্রপাত। পরে ক্রমান্বয়ে আশপাশের সরকারপাড়া, কাজীপাড়া, বণিকপাড়া, কালীবাড়ি মোড়, টি.এ রোড, কান্দিপাড়া, শিমরাইলকান্দি, মৌড়াইল, পুনিয়াট এবং নয়নপুর গ্রামেও হানা দেয় কুকুরটি। পরে উত্তেজিত জনতা কুকুরটিকে মারার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

 

আড়াইশ' শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আবু কাউসার (৪০), ফজলু মিয়া (৬০), জিন্নাহসহ (২৬) বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকালে বাজারে যাওয়ার সময় জেলা শহরের দক্ষিণ পৈরতলা বাসস্ট্যাণ্ডে পথযাত্রী এবং দূরপাল্লার বাসযাত্রীদের ওপর অতর্কিত হামলে পড়ে একটি কুকুর। যাকে সামনে পায় তাকেই কোনোরূপ উসকানি ছাড়াই কামড়াতে থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি এর আক্রমণ থেকে। বাসস্ট্যাণ্ড ছাড়াও তৎসংলগ্ন সরকার পাড়া, কাজীপাড়া, বণিকপাড়া, কালীকবাড়ি মোড়, টি.এ.রোড, কান্দিপাড়া, শিমরাইলকান্দি, মৌড়াইল, পুনিয়াউট এবং নয়নপুর এলাকার অন্তত শতাধিক মানুষকে ওই পাগলা কুকুরটি কামড়ায়। কুকুরের কবল থেকে নারী-শিশু-বৃদ্ধ কেউই নিস্তার পায়নি। এই নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাগলা কুকুরের কামড়ের আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। পরে উত্তেজিত জনতা মিলে তাড়া করে পাগলা কুকুরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পর জনমনে কিছুটা স্বস্থি ফিরে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফাইজুর রহমান ফয়েজ জানান, 'সকাল থেকে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত শতাধিক মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এর মধ্যে একজন রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল বাকিরা ভ্যাকসিন নিয়ে চলে গেছেন। হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহ আসায় আক্রান্তদের সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে একই সময়ে অধিক সংখ্যক মানুষের চাপ সামলাতে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে।' হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জামান সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে জানান, 'হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন মজুদ আছে। এই নিয়ে কোন দু:শ্চিন্তার অবকাশ নেই।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পাগলা কুকুরের কামড়ে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আহতেরা। পরে উত্তেজিত জনতা পাগলা কুকুরটিকে পিটিয়ে মেরেছে। সকালে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় কুকুরে কামড়ানো নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করলেও দুপুরের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ জানান, কুকুরের কামড়ে আহতরা হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন নিয়েছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ জলাতঙ্ক ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা আছে। এদিকে কুকুর নিধনে আইনগত বিধিনিষেধ আছে। এ বিষয়টি নিয়ে করনীয় বিষয়ে জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।