সপ্তম দফায় কক্সবাজারের উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। বুধবার (২৪ নভেম্বর) বেলা ১১টায় উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে সাতটি বাসে ২৫৭ জন রোহিঙ্গা রওনা দেয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ও সরকারের মধ্যে ভাসানচরে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সেখানে রোহিঙ্গাদের নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ দফায় প্রায় দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাবে।
জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে গতকাল বিকাল থেকে সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। বুধবার সকালে বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছে। রাতে চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে পৌঁছাবে। সেখান থেকে পরের দিন নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ভাসানচরে যাবে।
অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসু দ্দৌজা নয়ন জানান, সপ্তম দফায় প্রথম দলের রোহিঙ্গাদের একটি অংশ উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। এবারে কতজন যাচ্ছে সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।
রোহিঙ্গা নেতারা জানান, সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার কারণে আতঙ্কিত উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের লম্বাশিয়া, বালুখালীসহ বিভিন্ন শিবিরের অনেকে ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে। আগে সেখানে যেতে চায়নি তারা।
কক্সবাজার-৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচরের উদ্দেশ্যে উখিয়া ত্যাগ করেছে। রোহিঙ্গাদের আরও কয়েকটি দল যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ছয় দফায় ১৮ হাজার ৯৫ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া গত বছরের মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগের ও তখনকার মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বসবাস করছে। ওই বছরের নভেম্বরে কক্সবাজার থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। আশ্রয়ণ-৩ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।