ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মিয়ানমারে অস্ত্র ফেলে বিরোধীদের আলোচনায় বসতে অনুরোধ জান্তার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৪৭:০০ অপরাহ্ন | আন্তর্জাতিক

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তার সঙ্গে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। দিন যতই যাচ্ছে, মিয়ানমারে ততই সংগঠিত হচ্ছে জান্তাবিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী, আর দুর্বল হচ্ছে জান্তা।

 

বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত এলাকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ সংঘাতে ব্যর্থতার কারণে বেকায়দায় রয়েছে সরকারি বাহিনী। এমন অবস্থায় দেশের সকল অভ্যুত্থানবিরোধী শক্তিকে সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে আলোচনায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।

 

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের নেতারা তাদের বিরোধীদের অস্ত্র ফেলে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নাটকীয় এই প্রস্তাব বেশ দ্রুতই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

 

জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। এরপর থেকে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) গঠন করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশ শাসন করে চলেছে। এসএসি এবার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ)-কে “সন্ত্রাসবাদী পথ” ছেড়ে দিয়ে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ শুরুর আহ্বান জানিয়েছে।

 

মূলত গত বছর অক্টোবর থেকে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ঐক্যবদ্ধভঅবে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরের দখল নিতে সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে। এরপর থেকে এসব গোষ্ঠী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির বিভিন্ন অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

 

এই অবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের শুক্রবারের সংস্করণে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি)। প্রকাশিত এই বিবৃতিতে তারা বলেছে, “রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইরত জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন এবং পিডিএফ সন্ত্রাসবাদীদেরকে দলীয় রাজনীতি বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য রাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, যাতে সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী পথ পরিত্যাগ করে টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে জনগণের সাথে তারা হাত মেলাতে সক্ষম হয়।”

 

তবে আলোচনার এই প্রস্তাব বেশ দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। এই গোষ্ঠীর মধ্যে অভ্যুত্থানে অপসারিত নির্বাচিত আইনপ্রণেতারাও অন্তর্ভুক্ত আছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের মতে, প্রস্তাবটি বিবেচনার মতো নয় বলে জানিয়েছেন এনইউজির মুখপাত্র নে ফোন ল্যাট।

 

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করার পর গণতন্ত্রের দাবিতে রক্তাক্ত সংগ্রামে লিপ্ত হতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির বিরোধী দলগুলো গড়ে তোলে একটি সমান্তরাল সরকার, যেটি ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা এনইউজি নামে পরিচিত।

 

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে আসছে এনইউজি। আর এই কারণে এটি মিয়ানমারের সামরিক সরকারবিরোধী ছায়া সরকার বলে পরিচিত।

 

মিয়ানমারের রাজনৈতিক বন্দিদের সহায়তা দানকারী সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) বলছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক বাহিনী কমপক্ষে ৫ হাজার ৭০৬ জনকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ২১ হাজার মানুষকে আটক করেছে।

 

এছাড়া জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গত মাসে বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ “আশঙ্কাজনক” হারে বেড়েছে।

 

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভুত্থানে নেতৃত্ব দেন। বর্তমানে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধানও তিনি।

 

অভ্যুত্থানের পরপরই বন্দি করা হয় মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচিকে। এখনও কারাগারেই রয়েছেন তিনি।

 

মূলত অভ্যুত্থানের পরপরই সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি জনগণ। প্রথমদিকে সেই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ উপায়ে দমন করলেও একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করে সামরিক সরকার।

 

এ পরিস্থিতে ২০২২ সালের শুরু থেকে গণতন্ত্রপন্থি জনগণের একটি অংশ জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়া শুরু করে। আর তারাই একন জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।