শত কোটি টাকা ব্যয়ে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও নির্মাণ কাজে ধীরগতিসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগ সাজসে নিম্নমানের দায়সারা কাজ করছেন বলেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। কাজের ধীরগতিতে লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার লাখো মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে এখন বহুগুন। তবে সড়ক বিভাগ তা মানতে নারাজ, তারা বলছেন শুরুতে কিছুটা অনিয়ম হলেও এখন সঠিক নিয়মে কঠোর তদারকিতে কাজ চলছে। বাড়ানো বরাদ্ধ আর মেয়াদে আগামী মার্চ এপ্রিলে প্রায় কাজ শেষ হবে বলে জানায় সড়ক বিভাগ।
জানা যায়,অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেনি। আর্থসামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া এ জেলার সড়ক ও সেতু ব্যবস্থার উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে একটি প্রকল্প হচ্ছে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল মহাসড়ক প্রশস্ত করণ ও সংস্কার। এ সড়ক বাস্তবায়নে সরাসরি সুফল ভোগ করবে লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। এ প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্মীপুর অংশে রয়েছে মজুচৌধুরীর হাট ফেরিঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। যা বাড়িয়ে এখন করা হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মইনউদ্দিন লিমিটেড। তাদের হয়ে কাজ করছেন আলোচিত ঠিকাদার ইস্কান্দার মির্জা শামীম। কাজের শুরু থেকেই নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ অনুসরণ না করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বর্তমানেও একই অবস্থা বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
তাদের অভিযোগ বালুভর্তি (ফিলিং) করে যান চলাচল এবং যোগাযোগ নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না, পাশাপাশি পুরনো লেন মিলিয়ে কাজ করার কথা থকলেও তাও হচ্ছে না। সড়কে পুরোনো-পরিত্যক্ত পাথর ও ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। খোয়া ও বালু দিয়ে সাববেইজ করার কথা থাকলেও আগের কার্পেটিং সিলকোট ফের ব্যবহার করা হচ্ছে। সাববেইজের অনুপাত হবে ৭০ ভাগ খোয়া ও ৩০ ভাগ বালুর সংমিশ্রণে। কিন্তু এখানে নির্ধারিত বালু না দিয়ে ভিটি বালু ও নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। মেকাডমে ৮০ ভাগ যা আমদানিকৃত কালোপাথর ও ২০ ভাগ সিলেটসেন্ট দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও এখানে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে না সিলেটসেন্ট। বেইজ-২ এ মেকাডম করতে ৮০ ভাগ ইটের খোয়া ও ২০ ভাগ সিলেটসেন্ট দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও এখানে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও ভিটি বালু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। স্টকইয়ার্ডে বেসিক প্ল্যান্ট বসিয়ে বেইজ কোর্স এবং ওয়ারিং কোর্স করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। মাটি বাইরে থেকে এনে (ক্যারিং করে) রাস্তার পার্শ্ব বাঁধাই করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বিভিন্ন গাছের গুঁড়ি, ময়লা-আবর্জনা দিয়ে করা হচ্ছে এ কাজ। তবে, সরকারিভাবে সড়ক নির্মাণ কাজের তদারকিতে কেউ নেই, পাশাপাশি ঠিকাদারেরও কোনো নিজস্ব প্রকৌশলী নেই, শুধু শ্রমিক দিয়ে নির্মাণ কাজের তদারকি করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
রবিবার (২৪ জানুয়ারি) ওই সড়কের ১০ কিলোমিটার ঘুরে নির্মাণ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। রাস্তার বালুতে গাড়ী চলাচল ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-পথচারীরাও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলে জানান ।
তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক জানান, শুরুতে কিছুটা অনিয়ম হলেও এখন সঠিক নিয়মে কঠোর তদারকিতে কাজ চলছে। বাড়ানো বরাদ্ধ আর মেয়াদে আগামী মার্চ এপ্রিলে প্রায় কাজ শেষ হবে বলে জানান এ প্রকৌশলী।