চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ভিটে বাড়ি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের গোয়ালঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
গত শনিবার রাত আনুমানিক দিবাগত রাত আড়াইটার সময় উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ড ম্যাইঙ্গাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকার মনির আহমদ ও জগির আহমদ দু’সহোদরের মধ্যে বসতভিটে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে গত শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার সময় উভয়ের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে মনির আহমদ উত্তেজিত হয়ে তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে জগির আহমদের পরিবারের উপর অতর্কিত হামলা চালান। জগির আহমদের কোন ছেলে সন্তান না থাকায় মনির আহমদ ও তার ছেলে-মেয়েরা বিনাবাধায় ঘরে ঢুকে জগির আহমদের স্ত্রী রাশেদা বেগম(৫০) ও মেয়ে সুমাইয়া আক্তার(১৫)কে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। হামলায় জগির আহমদের স্ত্রী ও মেয়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করেন। এ ঘটনায় জগির আহমদ বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর স্থানীয় এক এলডিপি নেতা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার কথা বলে বাদীকে থানার অভিযোগ থেকে নিভৃত রাখে। পরে এলডিপি’র ওই নেতা আর কোন আপোষ মীমাংসা না করে নানা তালবাহানা করতে থাকেন। অবশেষে বিবাদী মনির আহমদের পক্ষ নিয়ে এলাকা উত্তপ্ত করার হীন মানষে জগির আহমদকে ফাঁসাতে রাতের আঁধারে গোয়ালঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ মোতবেক মনির আহমদ রাতের আঁধারে ছোট ভাইকে ফাঁসাতে নিজের গোয়ালঘরে আগুন দেন। এ ঘটনায় মনির আহমদ বাদী হয়ে একটি মামলাও দায়ের করেছেন বলে জানা যায়।
হামলার শিকার জাগির আহমদের স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, মনির আহমদ, আমি ও আমার মেয়ের উপর হামলা করার সময় এলডিপি নেতা আবদুর রাজ্জাক প্রকাশ মহিউদ্দিনের বাপ ১০ গজ দূরে দাঁড়িয়েই উষ্কানী দিচ্ছিলেন এবং আমাদেরকে মারার জন্য উৎসাহ দিচ্ছিলেন।
জগির আহমদ জানান, আমার স্ত্রী ও মেয়ের উপর হামলা করে গুরুতর আহত করার পর মামলা থেকে রেহাই পেতে আমাকে ফাঁসানোর জন্য নিজেই নিজের গোয়ালঘরে আগুন দিয়েছে। আমি একজন নিরীহ লোক। আমার এলাকায় এ ধরনের খারাপ কাজের নজির নেই। এলাকবাসী বিষয়টি ভাল করেই জানে।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে তদন্ত করে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মনির আহমদ নিজেই গোয়ালের গরু অন্যস্থানে সরিয়ে গভীর রাতে যখন এলাকাবাসী ঘুমে বিভোর তখনই গোয়ালঘরে আগুন লাগিয়ে দেন।
এলাকার অনেকের সাথে কথা বললেও এলডিপি’র নেতার ভয়ে সকলেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এলাকার এমনই একজন যিনি ঘটনার সময় গভীর রাতে প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে ঘরের বাইরে আসেন। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মনির আহমদ ও তার পক্ষের কয়েকজন লোক নিয়ে নিজের গোয়ালঘরে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন। অতপর কিছুক্ষণ পর চিৎকার শুরু করেন।
যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত মনির আহমদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার গোয়ালঘরে আগুন দেব কি জন্য? আমার ভাই ও তার স্ত্রী রাতে আগুন দিয়েছে। আমার একটি ৫৫ হাজার টাকার গরু কোথায় পালিয়ে গেছে নাকি পুড়ে গেছে এখনো খবর পাইনি।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত বলেন, গোয়ালঘরে আগুন দেয়া সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থানায় আসেনি। তবে এক মহিলা ও তার মেয়েকে মারধর এবং দা’ দিয়ে কোপ দেয়ার একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।