ঢাকা, রবিবার ১৯ মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘চেয়েছিলাম দেশের ক্রিকেটের সেবক হতে, কিন্তু সুযোগ পেলাম কই!’

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৪:৩৮:০০ অপরাহ্ন | খেলাধুলা

কিংবদন্তি শ্রীলঙ্কান স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং পেসার চামিন্দা ভাস বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিককে নিয়ে গিয়েছিলেন কলম্বোয় তাদের ক্রিকেট একাডেমিতে। মুরালির উপস্থিতিতেই সেখানকার উঠতি ক্রিকেটারদের স্পিন বোলিংয়ের টেকনিক শেখান রফিক।

প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা টেকনিক শিখিয়ে হোটেলে ফিরে এসেছিলেন বাংলাদেশের এই কিংবদন্তি স্পিনার। এমনকি বাংলাদেশের বর্তমান স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ পর্যন্ত এক সময় টেকনিক শেখার জন্য রফিকের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন। ঘটনাটা ২০০৫-২০০৬ সালের দিকে।

সেই মোহাম্মদ রফিক, ক্রিকেট ছেড়েছেন আজ একযুগেরও বেশি সময় হয়ে গেলো, এর মধ্যে কত বিদেশি স্পিন কোচ এলো-গেলো কিন্তু নিজে থেকে আগ্রহ প্রকাশ করার পরও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে কোনো পর্যায়েই কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার গরজ দেখায়নি। বার কয়েক মুখে উচ্চারণ করলেও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

কেন এতটা উপেক্ষার শিকার? জানেন না রফিক নিজেও। শুধু আক্ষেপটাই জানাতে পারেন তিনি মিডিয়ার কাছে। আশাভরা বুক নিয়ে তাকিয়ে থাকতে পারেন বিসিবি কর্মকর্তাদের দিকে, যদি কখনও তার ডাক আসে!

প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপে কোচিং নিয়ে এমনই আক্ষেপ আর অনুশোচনার কথা উঠে এসেছে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ের নায়ক, প্রথম ১০০ উইকেট শিকারি বোলার মোহাম্মদ রফিকের মুখে।

‘আপনি কেন কোচিংয়ে আসছেন না?’

এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রফিকের একবুক হতাশা মাখা জবাব, ‘আমি কী বলবো? আমি তো মুখিয়ে আছি কাজ করার জন্য। মনেপ্রাণে চাই দেশের ক্রিকেটের জন্য কিছু করতে। এই ক্রিকেট খেলে আমি বড় হয়েছি। বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার কারণেই এখন আমাকে দেশে ও বিদেশে অনেক মানুষ চেনে। ক্রিকেটই আমার ধ্যান-জ্ঞান। আমি খেলা ছাড়ার পরপরই চেয়েছিলাম দেশের ক্রিকেটের সেবক হতে। এখনো কায়মনোবাক্যে চাই দেশের ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে থাকতে। দেশের ক্রিকেটের জন্য কিছু করতে। কিন্তু হায়! সে সুযোগ পেলাম কই?’

বোর্ড প্রেসিডেন্ট বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রফিককে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেবেন বলে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ নিয়ে রফিক বলেন, ‘বোর্ড প্রেসিডেন্ট বেশ কয়েকবার ঘটা করে বললেন, আমাকে স্পিন কোচ হিসেবে নেওয়া হবে। কিন্তু তা শুধু মুখেই থেকে গেলো। বাস্তবে কোনো প্রস্তাবও পেলাম না, দায়িত্বও কাঁধে দেওয়া হলো না। আমাকে কেন কোনো পর্যায়ে স্পিন কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না, কী কারণে নিচ্ছে না, আমি তার কিছুই জানি না। তবে আবারও বলছি আমি প্রস্তুত। দেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করতে আমি মুখিয়ে আছি।’

জাতীয় দল ছাড়া আর কোথাও কোচিং করাবো না- এমন কোনো শর্ত জুড়ে দেননি রফিক। বরং তার ইচ্ছা এবং আশা বয়সভিত্তিক কোনো পর্যায়ে যুক্ত করা হলে বরং সবচেয়ে ভালো হয়। ছোটদের শেখাতে পারলে সেটা দেশের জন্যও সুফল বয়ে আনবে।

মোহাম্মদ রফিকের কথা, ‘জাতীয় দল, এইচপি, একাডেমি, এমনকি বয়সভিত্তিক দলে কাজ করতেও আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি সদ্য কৈশোর পার করা ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে কাজ করতে চাই। কিন্তু কোনো প্লাটফর্ম পাচ্ছি না।’

গর্ডন গ্রিনিজকে সংবর্ধনা দেওয়ার সময়ও অনেক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। কিন্তু এরপর সবাই চুপচাপ। রফিক বলেন, ‘গর্ডন গ্রিনিজকে যখন সংবর্ধনা দেয়া হলো, তখন তো সবাই বললেন যে আমাকে স্পিন কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু তার বাস্তব রূপ তো দেখলাম না।’

আক্ষেপের সুরটা আরও চড়া করে রফিক বলেন, ‘আমাদের সাবেক ক্রিকেটারদের আসর ক্রিকেট কার্নিভাল খেললাম কক্সবাজারে। সেখানেও আমার সঙ্গে কথা হলো অনেকের। আমাকে অনেক বলা হলো। ভেবেছিলাম হয়ে যাবে; কিন্তু কিছুই হলো না। আসলে বোর্ডের লোকজন কীভাবে চিন্তা করছে আমি কিছুই জানি না।’

প্রায় একযুগ আগে অবসর নিয়েছেন রফিক। তখনই চেয়েছিলেন দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হবেন, কিন্তু কোনো সুযোগই তিনি পাচ্ছেন না। রফিক বলেন, ‘দেখেন আমি ২০০৯-এ অবসর নিয়েছি। এখন ২০২২। প্রায় একযুগ পার হয়ে গেছে। অথচ আমি এ দীর্ঘ সময়ে একবারের জন্যও স্পিন বোলিং কোচিং করানোর কোনো সুযোগ পেলাম না। কত বড় একটা দীর্ঘ সময় কেটে গেল! কত দীর্ঘ গ্যাপ পড়ে গেছে!’

সুযোগ পেলে কিশোর-তরুণদের অনেক কিছু শেখাতে পারতেন বলে বিশ্বাস রফিকের। তিনি বলেন, ‘যদি সুযোগ পেতাম, তবে অবশ্যই আমার দেশের যারা কিশোর-তরুণ আছে, তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারতাম। জানাগুলো অল্প বয়সীদের সাথে শেয়ার করতে পারতাম। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তাদের অনেক কিছু শিখাতে পারতাম। দুঃখ লাগে; কিন্তু করার তো কিছু নেই। আমার ক্রিকেট বোর্ডের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়াটা তো আর আমার হাতে নেই।’