ঢাকা, শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

হাতি হত্যার ঘটনায় শেরপুরে ছায়া তদন্ত করেছে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ)

তারিকুল ইসলাম, শেরপুর প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:১৫:০০ অপরাহ্ন | গণমাধ্যম
শেরপুরসহ দেশজুড়ে একের পর এক হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনার কারণ উদঘাটনে ছায়া তদন্ত করছে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ)। তদন্তের অংশ হিসেবে শেরপুরে হাতি হত্যার ঘটনাস্থলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর ঘুরে বেড়িয়েছেন জোটের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের সংগে। দুইদিনব্যাপী তদন্ত কার্যক্রম শেষে শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।
 
বিকেলে প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত মিট দ্য প্রেস-এ বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের আহ্বায়ক ও ছায়া তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, শেরপুরের আগে কক্সবাজারেও ছায়া তদন্ত করেছেন তাঁরা। দুইটি জেলার তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যসহ যাবতীয় তথ্য যাচাই শেষে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বিএনসিএ।
 
ছায়া তদন্তে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট সব মহলের সংগে কথা বলার চেষ্টা করেছি। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য হিসেবে বলতে পারি, বন, বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ ক্রমাগতভাবে ব্যার্থ হচ্ছে। বনের জায়গায় অবৈধ দখলই হাতিসহ বন্যপ্রাণীদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের যাচাই বাছাইয়ে হাতি হত্যা বন্ধে অবৈধ বসবাসকারীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। আর এই কাজে সহযোগিতার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের দায় কোনো অংশে কম ছিল না। তাঁরা বনের জমিতে অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন করেছে। এত আলোচনা-সমালোচনার পরও তারা সংরক্ষিত বন থেকে বিদ্যুৎ লাইন সরায়নি। ফলে এসব ঘটনার দায় তারা কোনোভাবে এড়াতে পারে না।
 
তিনি আরও বলেন, বন বিভাগ হাতি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের মাধ্যমে সোলার ফেন্সিং পদ্ধতি সংযুক্ত করেছিলো এখন সেটির কোনো কার্যকারিতা নেই। তাঁরা বরাবরই প্রকল্পের মাধ্যমে বন-বন্যপ্রাণী রক্ষার চেষ্টা করে, প্রকল্প শেষ হলে বন আবার অনিরাপদ হয়ে পড়ে। এখানেও তেমনই ঘটেছে। বনে হাতির খাবার কমার কারণেও সংঘাত বেড়েছে। তাছাড়া, জনসচেতনতার নামে নানান প্রকল্পের টাকা ব্যায় করা জনগণের মধ্যে বন্যপ্রাণী রক্ষা সংক্রান্ত তেমন জ্ঞান দেখা যায়নি। সর্বোপরি বনের জায়গায় সাধারণ মানুষের বসবাসই বন উজাড় এবং বন্যপ্রাণীর জন্য সবচেয়ে বেশি হুমকির কারণ হয়েছে বলেও জানান ছায়া তদন্ত কমিটির প্রধান।
 
বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কয়েকটি পরামর্শও তুলে ধরেন বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের আহ্বায়ক। সেগুলো হলো- হাতি হত্যার ঘটনাগুলোর  বিচারবিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করা; হাতি হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা; অবৈধ দখলদারদের খাস জমিতে পূনর্বাসন; প্রকল্পের মাধ্যমে নয়, বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য নিয়মিত বাজেট রেখে বন বিভাগের মূল দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে; বনে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করতে হবে; বন বিভাগের পর্যাপ্ত জনবল দেওয়া এবং এলিফ্যান্ড রেস্পন্স টিমতে আর্থিক সুবিধা বাড়াতে হবে; বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় গণমাধ্যমকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে।
 
এর আগে শুক্রবার জোট প্রধান পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার এর নেতৃত্বে ঢাকা থেকে আসেন ৬ সদস্যের ছায়া তদন্ত দল। দলের অন্য সদস্যরা হলেন- সেভ আওয়ার সি এর মহাসচিব মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, প্রাণ ও প্রকৃতি সাংবাদিক কেফায়েত শাকিল, গ্রীণ ফাইটিং মুভমেন্টের সভাপতি নাবিল আহমদ, সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার ও অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন (রূপা)।