ঢাকা, সোমবার ৬ মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১

গ্রীষ্মকালে দুর্ভোগের নাম ‘কাপ্তাই হ্রদ’

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৮ জুন ২০২২ ১১:১৫:০০ পূর্বাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাঙামাটির মিঠা পানির কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ এক অপার সম্ভবনার নাম। এ হ্রদের ওপর নির্ভরশীল পুরো জেলাবাসীর জীবন-জীবিকা। যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, কৃষি, মৎস্য, খাবার পানি সব এ হ্রদকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। তাই এ হ্রদের ভালো-মন্দ স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকায় প্রভাব ফেলে।  

প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে কাপ্তাই হ্রদের পাড়ের বাসিন্দাদের ভাগ্যে দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসে। জেলা সদরের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা, সৃষ্টি হয় সেচ সংকট, মৎস্য উৎপাদন কমে যায় এবং শুরু হয় লোডশেডিং।

এখানে বলে রাখা ভালো, জেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি উপজেলার মূল (জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি) যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো কাপ্তাই হ্রদ। কেননা কাপ্তাই হ্রদ ব্যবহার করে নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলাগুলোর। তবে জেলা সদরের সঙ্গে কাপ্তাই, নানিয়ারচর এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগের পাশাপাশি সড়ক পথ গড়ে ওঠায় সেসব উপজেলার বাসিন্দাদের যোগাযোগের জন্য কাপ্তাই হ্রদের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় না।  

বর্তমানে এই গ্রীষ্ম মওসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে হ্রদ পাড়ের বাসিন্দাদের জন্য জেলা সদরের সঙ্গে নৌপথে যোগাযাগ করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় পরিবহন খরচ বাড়ছে। ফলে জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে। এসব কারণে ওইসব এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা দুঃখ, কষ্টে অনহারে জীবন পার করছে। লঞ্চ চালক-মালিকরাও অর্থকষ্টে জীবনপযাপন করছে।

কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবি, কাপ্তাই হ্রদে যেন ড্রেজিং (খনন করা) করা হয়। কিন্তু সরকার যায়, সরকার আসে, আমলারা বুলি আওড়ায়; কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং হয় না।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন সরকার ১৯৫৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর ওপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করে। পরে সৃষ্ট হ্রদটি মৎস্য সম্পদ, কৃষি সম্পদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেইসঙ্গে হয়ে ওঠে যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

কাপ্তাই হ্রদের বোট চালক মো. রফিক বলেন, গ্রীষ্ম মওসুমে আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়। বোট চালাতে না পারায় আমাদের বেকার সময় পার করতে হয়। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিন চালাতে হয়।  

বোট মালিক রমজান হোসেন রণি বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে দুই-তিন মাস বোট চালানো যায় না। চালকদের বেতন দিতে চরম হিমশিম খেতে হয়।

জেলা শহরের রিজার্ভবাজার এলাকার লঞ্চঘাটের কেরানী মো. শফিকুল আলম জানান, পলি জমে পুরো হ্রদ ভরে গেছে। গভীরতা হ্রাস পেয়েছে। গ্রীস্ম-বর্ষায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে  ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।

রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, চরম দুর্ভোগের নাম কাপ্তাই হ্রদ। প্রতি গ্রীষ্ম মওসুমে আমাদের লঞ্চ মালিকদের চরম দুর্দশা নেমে আসে। লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় মালিকরা আয় বঞ্চিত হয়; শ্রমিকরা বেকার জীবন পার করে।

লঞ্চ মালিক সমিতির এ নেতা আরও বলেন, দ্রুত উদ্যোগী হয়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করতে হবে। তাহলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে, দুঃখ, দুর্দশা লাগব হবে। এজন্য সরকারের কাছে অনুরোধ, কাপ্তাই হ্রদের দিকে দয়ার চোখে যেন ফিরে তাকান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাহলে এ সমস্যা অনায়সে সমাধান হয়ে যাবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদূর ঊশৈসিং এমপি বলেন, চলতি অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিংয়ের জন্য বাজেট চাইবো। আশা করছি ফলপ্রসু কোনো সুসংবাদ পাবো। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করা হয়েছে আগে।