ঢাকা, রবিবার ৫ মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

ফটিকছড়িতে দুই বছর পর পুত্রবধূর বাড়িতে মৃত শাশুড়ির হত্যার আলামত প্রকাশে এলাকায় চাঞ্চল্য

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:২৮:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির রোসাংগিরি এলাকার মুন্নার মা নুরজাহান বেগম পুত্রবধুর বাড়ি ১নং ফরহাদাবাদ খালপাড় এলাকার ডাক্তার বাড়ি রোডে সাহাবমিয়ার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে (গত ২৯শে অক্টোবর, ২০২১) গভীর রাতে মৃত্যুবরন করেন। নিজ ছেলে ম্ন্নুার শ্বশুড় বাড়িতে মা মারা গেলে স্ত্রী জেসমিন আক্তারের পরিবার তাকে হৃদরোগে মারা গেছেন বলে প্রচার করেন। মুন্নার মৃত মা নুরজাহান বেগমের লাশ এলাকায় নিয়ে এলে তার পরিবার ও এলাকার জনগণ এই মৃত্যুটাকে স্বাভাবিক ভেবে তাকে পারিবারিক কবরস্থ করে। জানা যায়, তারা কোন ডাক্তার ও ডেথ সার্টিফিকেট চায়নি। তবে জানাযাকালে মুন্নার চাচাতো ভাই আবু আহম্মদের মনে এই মৃত্যুটি নিয়ে সন্দেহ জাগলেও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এই সন্দেহগুলোকে মিথ্যা সন্দেহ ভেবে উড়িয়ে দেয়। জেসমিনের পরিবারের বিশ^াসযোগ্য কথায় তারা কোন তদন্ত বা সন্দেহটাকে নিয়ে এগোয়নি। এভাবে গত দুবছর অতিক্রম হয়ে যায়। মুন্না সাউথ আফ্রিকায় থাকে। তার সাথে বর্তমানে তার স্ত্রী জেসমিন ও তার একমাত্র মেয়ের কোন সম্পর্ক নেই। দীর্ঘদিন হয় সে তাদের কোন খবর জানেনা। জানা যায়, মুন্নার বোনেরা তাদের স্বামীর সংসারে অবস্থান করে। রোসাংগিরিতে তাদের সেই পুরানা টিনের ঘরটি এখন ফাকাই বলা যায়। 

গত কয়দিন ধরে অচেনা কোন একজন ব্যাক্তি তার মোবাইল নম্বর থেকে এলাকার মেম্বার মবিন শাহ ও তার চাচতো ভাই আবু আহম্মেদের মোবাইলসহ আরো কয়েকজনের মোবাইলে সেই মৃত্যুর বিষয়ে মেসেজ, অডিও ও ভিডিও প্রচার করে। স্যোসাল মিডিয়াতেও তার শাস্তি দাবী করে অনেকে পোষ্ট করে। তার জের ধরে গত দুবছর পূর্বের মুন্নার মায়ের মৃত্যুর ঘটনা আবার আলোচনায় আসে। সেই মেসেজ, অডিও ও ভিডিও সুত্রে জানা যায়, পুত্রবধু জেসমিন আক্তার(শাহিন) তার শাশুড়িকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অচেতন করে শ^াসরোদ্ধ করে গভীর রাতে হত্যা করে। ভিডিও সুত্রে দেখা যায়, সে মুন্নার সংসারে এলেও তার পূর্ব পরকিয়া প্রেমের জের রয়ে যায়। সে তার প্রেমিককে বিশ^াস করানোর জন্য হত্যার প্রতিটি চিত্র ধারণ করে তার প্রেমিককে সে পোষ্ট করে জানান দেয়। সে যে তার জন্য হত্যা করেছে, কি খাইয়ে অচেতন করেছে, কিভাবে হাত পা বেঁধে শ^াসরোদ্ধ করে তাকে মেরেছে তা জানান দেয়। এসব মেসেজ, অডিও ও ভিডিও এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পুরানো সেই মৃত্যুটি নতুন করে হত্যা জেনে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনার বিষয় হয়ে দাড়ায়। 

এ বিষয়ে মুন্নার চাচাতো ভাই আবু আহম্মদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, মৃত্যুর সময় আমি দেশেই ছিলাম। তারা যখন আমার চাচির লাশ নিয়ে আসে তখন তার মুখ দেখে আমি সন্দেহ করেছিলাম। কিন্তু কেউ আমার সেই সন্দেহকে আমলে নেয়নি। মৃত্যুর প্রায় সাত আট মাস পর তার স্ত্রী জেসমিন মুন্নার সংসার থেকে চলে যায়। পরে শুনি মুন্নাকে তার স্ত্রী জেসমিন বেগম একটি তালাক নামা পাঠায়। কিন্তু শুনেছি, আমার চাচতো ভাই সেটা গ্রহন করে নাই। মুন্নার স্ত্রী আর ফিরে আসে নাই। সে চলে যাওয়ার পর আমার বড় ভাইকে সন্দেহ করেছিল। তারা ভেবেছে আমার বড় ভাই তাকে সরিয়ে রেখেছে। পরবর্তীতে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারলাম, সে তার প্রেমিকের সাথে কোথাও বসবাস করছে।

 দক্ষিন আফ্রিকায় কর্মরত জেসমিনের স্বামী মুন্নাকে হোয়াটস আপে ফোন দিয়ে তার মায়ের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানতাম, আমার মা স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে জান্নাতে চলে গেছে। এসব অডিও ভিডিও আমিও পেয়েছি এবং দেখেছি। আমার মনে হয়, যে আমার মাকে হত্যার এসব অডিও ভিডিও ফাঁস করছে, সেই বেশী জড়িত। আমি তার বিচার আগে চাইবো। হয়তো তার ইন্ধনেই আমার স্ত্রী আমার মাকে মারার পরিকল্পনা করেছে। এবং আমার ঘর ছেড়ে চলে গেছে। আমি এখনো থানায় অভিযোগের সিদ্বান্ত নেইনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করে আপনাদের জানাবো।

এ বিষয়ে রোসাংগিরি গ্রামের ইউপি সদস্য মবিন শাহ বলেন, আমরাও জানতাম তার স্বাভাবিক মৃত্যু । এখন অডিও ও ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে মুন্নার মা স্বাভাবিক ভাবে মরে নাই। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আপনারা সাংবাদিক এটা অনুসন্ধান করে দেখেন। যদি ঘটনা সত্যি হত্যাকান্ড হয় তবে আইন অনুযায়ী হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হোক তা আমি চাই।    

ঘটনার সত্যতা জানতে জেসমিন আক্তার ও তার মায়ের একাধিক মুঠোফোনে ফোন দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার পরিবারের পাশ^বর্তী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আমাদের এলাকায় তার শাশুড়ী মারা যায়। পরবর্তীতে জামাইর আত্নীয় স্বজন এসে লাশ নিয়ে যায়। শুনেছি জেসমিন মেয়েটা তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে নেই। পরে সে অন্যত্র সংসার করছে। সে পরিবারের মেঝো মেয়ে। এখন সে এই গ্রামে আসেনা।