ঢাকা, সোমবার ৬ মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১

লোডশেডিং-এ অস্বস্তি জনজীবনে

মুহাম্মদ জুয়েল, বোয়ালখালী : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০১:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চৈত্র মাসের গাঁ ফাটা গরমে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম। গেল শনিবার থেকে লোডশেডিং বেড়ে যায়। গত এক সপ্তাহ ধরে লোডশেডিং-এ নাকাল জনজীবন। এদিকে রোজার শেষের দিকে এসে এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ঈদ মার্কেটেও প্রভাব পড়েছে। সাধারণত ইফতারের পর থেকে সেহেরির আগ পর্যন্ত শপিংমল, মার্কেটগুলোতে ঈদের কেনাকাটা চলে হরদম। এরমধ্যেই বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে। এতে আইপিএস ব্যাটারি ঠিকমতো চার্জফুল করতে যথাযথ সময় পাচ্ছে না। জেনারেটর চালাতে সময় নিচ্ছে মোটামুটি। বিদ্যুতের এই আসা-যাওয়ার খেলার মধ্যকার সময়ে দোকানি-ক্রেতা উভয়েই অতিষ্ঠ। এতে পকেটমার আতঙ্কেও রয়েছে ক্রেতারা।

 

 

পিডিবি বলছে, অফ পিক আওয়ারে লোডশেডিং নেই। পিক আওয়ারে ২২০ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

 

পিডিবির চট্টগ্রাম বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. কামাল উদ্দীন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ জন্য লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ। এসব কেন্দ্র পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পেলেই কেবল চালু করা যাবে। গ্যাস না পাওয়া পর্যন্ত চালু করা যাবে না এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকবেই।

 

এদিকে চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) পিজিসিবি মদুনাঘাটের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরউদ্দীন মোহাম্মদ ফরহাদ চৌধুরী বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চেয়ে জানিয়েছেন, গত একমাস যাবৎ শিকলবাহা-টি.কে-মদুনাঘাট ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইনের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়নের ৩০, ৩০ (৫), ৩৯, ৩২, ৩৩ নম্বর টাওয়ার এবং রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া কচুখাইন চরের শিকলবাহা-টি.কে-মদুনাঘাট ১৩২ কেজি সঞ্চালন লাইনের ১৫ ও ১৬ নম্বর টাওয়ারের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরি হয়েছে।

 

এ নিয়ে গত ৩১ মার্চ গ্রিড উপকেন্দ্রে সঞ্চালন লাইনের মালামাল এবং টাওয়ার এঙ্গেল চুরি রোধে সহযোগিতা চেয়ে তিনি আরো জানান, মদুনাঘাট ১৩২/৩৩ কেভি ও শিকলবাহা ২০০/১৩২ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র এবং টি. কে. সঞ্চালন লাইনসমূহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। গত একমাস যাবৎ মদুনাঘাটের আওতাধীন বিভিন্ন গ্রিড উপকেন্দ্রে (কে.পি.আই) ও সঞ্চালন লাইন গুলোতে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি বড় রকমের চুরি সংঘটিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, সঞ্চালন লাইন সমূহে কতিপয় দুষ্কৃতকারী সংঘবদ্ধ একটি গ্রুপ রাতের আঁধারে সরকারের মূল্যবান মালামাল এঙ্গেল সমূহ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে এবং নাশকতার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

 

অন্যদিকে টানা অনাবৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস নামে। ফলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ কম যাওয়ায় এখানে সরবরাহও কমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়লা ও জ্বালানি সংকট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত করার অন্যতম কারণ। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মূলত গ্যাস, তেল ও ফার্নেস অয়েল দিয়ে চলে। ঠিকমতো কয়লা আমদানি করা না গেলে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সংকট সামনে আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। আরেকটা সূত্র বলছে, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম। তাই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৮ কোটি ঘনফুট। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। সেখানে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ। 

 

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, জাতীয়ভাবে যা চাহিদা তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে যা ৯ এপ্রিল মধ্যে ঠিক করা হবে। সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। কারণ এখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু গ্যাস সংকটের  কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গ্যাসের পর্যাপ্ত পেলে বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দ্রুত চালু করা হবে।

 

 

গরমের শুরুর সময়ে ভয়াবহ আকারে লোডশেডিং ফিরে এসেছে বোয়ালখালী সহ আশপাশের রাউজান,  হাটহাজারী, মোহরা, পটিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারী, বাঁশখালীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। বিদ্যুতের এধরনের বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে সাংবাদিক এমরান কাদেরী বলছেন, বিদ্যুৎ বিভাগ একসময় লোডশেডিং শব্দটি বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইনে ত্রুটি বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট ব্যবহার করেছে।

 

 

পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১ হাজার ২৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে প্রতিনিয়তই চট্টগ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত।