ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইইউ বাজারে বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে জোরদার উদ্যোগের তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২ জানুয়ারী ২০২২ ১২:২৪:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে। বাজারটিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ওই সুবিধা অব্যহত রাখা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এখন থেকেই জোরদার উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাণিজ্য সুবিধা অব্যহত রাখতে আলোচনা হবে সরকারের মধ্যে। তবে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে বেসরকারি খাতে। এজন্য সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে এখনই পলিসি ডায়ালগের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার একটি রূপরেখা তৈরি করা দরকার।

 

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘এই বিষয়টি হচ্ছে দুই সরকারের সঙ্গে আলোচনা। সেখানে বেসরকারি খাত সম্পৃক্ত হতে পারবে না। আমরা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি তারা যেন তাদের সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করে।’

 

 

২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে এবং এরপর উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রুলস অফ অরিজিনের ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি এটি একান্তই না পাওয়া যায় তবে এখনই সরকারের সঙ্গে পলিসি ডায়ালগ করা দরকার, কীভাবে ২০২৯ সালের মধ্যে আমরা সক্ষমতা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত করতে পারি।’

বাংলাদেশের নিট ও ডেনিম খাতের কিছুটা সুরক্ষা আছে, কিন্তু ওভেন বা নাইলন পলিয়েস্টারে এখনও সক্ষমতা আসেনি বলে জানান পোশাক খাতের এই ব্যবসায়ী। তিনি মনে করেন, এজন্য সরকারের সঙ্গে পলিসি ডায়লগ করা দরকার। যাতে করে চীন, তাইওয়ান বা জাপানিজ কিংবা অন্য কোনও দেশের বড় কোম্পানিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা যায় এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, ওই সময়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদেরও সক্ষমতা বাড়বে এ ধরনের বড় বিনিয়োগ করার জন্য। একটি তৈরি পোশাক শিল্পে একশ বা দুইশ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। কিন্তু একটি পলিয়েস্টার তৈরির ফ্যাক্টরি করতে ২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। বেসরকারি খাত বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার যেমন ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য, ইউরোপিয়ান কমিশনের কর্মকর্তা, প্রভাবশালী ক্রেতা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ অনেকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান।

রাকিব বলেন, ইইউ শুধুমাত্র বাণিজ্য বিষয় বিবেচনা করে জিএসপি প্লাস দেবে না। এরসঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ইইউ এর নিজস্ব স্বার্থসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

সরকারের অবস্থান

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। ইইউ শুধুমাত্র বাণিজ্য অংশীদার নয়, তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন পথযাত্রায় বড় অংশীদার। একমাত্র ইইউ এলডিসি থেকে উত্তরনের পর তিন বছর সব সুবিধা বহাল রাখে।

রানা প্লাজার পর দুই পক্ষের আলোচনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অন্য কোনো দেশ বা জোটের সঙ্গে এত নিবিড় আলোচনা হয় না বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ২০২৪ এর ১ জানুয়ারি থেকে নতুন জিএসপি রেগুলেশন বলবৎ হবে। ওই নতুন রেগুলেশনে বাংলাদেশের জন্য অনেক ইতিবাচক দিক আছে। রেগুলেশন এখন যে পর্যায়ে আছে ২০২৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে এবং এরপরে জিএসপি প্লাসে আমাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, ছোটখাট সমস্যা যা আছে সেটি নিয়ে আমরা কাজ করা শুরু করেছি এবং আশা করছি এটিও দূর হয়ে যাবে। আমাদের জন্য সময় আছে কারণ রেগুলেশনটি চূড়ান্ত হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের দিকে। এরমধ্যে অনেক আলোচনা করার সুযোগ আছে।

তপন কান্তি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ইইউ এককভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে জিএসপি প্লাসের জন্য আবেদন করতে হয়। তখন তারা যাচাই-বাছাই করে। ইইউ সবসময় স্বল্পোন্নত দেশ বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন মাথায় রেখে তাদের বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করে। আমরা আশা করি এটি বাংলাদেশের জন্য বহাল থাকবে।