টানা প্রায় সাত মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনে ইউক্রেন শুরুতে কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও দেশটি এখন পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। এতে করে সফলতার দেখাও পাচ্ছে দেশটি।
আর এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের পাল্টা হামলার জবাবে দেশটিতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অনুরোধ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করতে পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান বাইডেন। রোববার এই সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার হওয়ার কথা রয়েছে।
রয়টার্স বলছে, সিবিএস নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কৌশলগত পারমাণবিক বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার না করার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সপ্তাহখানেক আগে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ামে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। ইউক্রেনের এই অঞ্চলটি চলমান যুদ্ধের প্রধান ফ্রন্ট লাইনগুলোর একটি।
চলমান সামরিক অভিযানে ইজিয়ামকে লজিস্টিক বেস হিসাবে ব্যবহার করছিল রাশিয়ান বাহিনী। এখান থেকেই রুশ সেনারা দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাস অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল।
তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যাপক হামলায় গত সপ্তাহান্তে হাজার হাজার রুশ সৈন্য ইজিয়াম থেকে পালিয়ে যায়। তারা বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম ফেলে রেখে যায়। এরপর থেকে শহরটি ইউক্রেনের অধীনে রয়েছে। ইউক্রেনে হারানো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করার জন্য জাতীয়তাবাদীদের চাপের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া।
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, রুশ সৈন্যদের আরও চাপের মধ্যে রাখা হলো মস্কো আরও শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিক্রিয়া জানাবে। আর এতে উদ্বেগ দেখা দেয় যে, তিনি হয়তো ইউক্রেনে ছোট পারমাণবিক বা রাসায়নিক অস্ত্রের মতো কোনো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
শনিবার সিবিএস নিউজের প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের একটি ক্লিপে ‘৬০ মিনিটস’ এক প্রতিবেদক বাইডেনের কাছে জানতে চান- পুতিন যদি এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করেন তাহলে তাকে আপনি (বাইডেন) কি বলবেন? জবাবে বাইডেন বলেন: ‘করবেন না। করবেন না। করবেন না। এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হলে যুদ্ধের চেহারা এমনভাবে বদলে যাবে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কখনও দেখা যায়নি।’
তবে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে সে বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিছু বলেননি। অবশ্য এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পরমাণু শক্তিকে ‘বিশেষ সতর্কাবস্থায়’ রাখার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের পুতিন বলেছিলেন, পশ্চিমা বিশ্বের ‘আগ্রাসী মনোভাবের’ কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সম্প্রতি রুশ সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ইউক্রেনের কিছু এলাকা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলোতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো এখন আরও কট্টর কৌশল গ্রহণ করতে পারেন। প্রায় ৮০ বছর ধরে বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। অনেক দেশই এই অস্ত্রকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হিসেবে মনে করে।
ধারণা করা হয়, রাশিয়ার কাছে ৫ হাজার ৯৭৭টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। এই হিসাব দিয়েছে মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি ফেডারেশন। তারা বলছেন, এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার ওয়ারহেডের মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং সেগুলো বাতিল করে দেওয়ার কথা।
বাকি সাড়ে চার হাজার কিংবা তার চেয়েও কিছু বেশি ওয়ারহেডের মধ্যে বেশিরভাগ কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র- ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট, যা দূরপাল্লার হামলা চালাতে সক্ষম। বাকি অস্ত্রসমূহ ছোট বা কম বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র যা স্বল্প-পাল্লা বা কম দূরত্বের- মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে বা সাগরে ব্যবহারযোগ্য অস্ত্র।
তবে এর মানে এই না যে, রাশিয়ার হাজার হাজার দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত আছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই মূহুর্তে রাশিয়ার প্রায় ১৫০০ ওয়ারহেড মোতায়েনকৃত অবস্থায় আছে, যার অর্থ হচ্ছে সেগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমারু ঘাঁটি এবং সমুদ্রে সাবমেরিনে বসানো আছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত খুব কম।
অবশ্য রাশিয়া যদি সত্যিই এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে ফেলে তবে সেটির মার্কিন প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেছেন বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়া ‘পৃথিবীতে তাদের আগের চেয়ে আরও বেশি প্যারিয়াহ বা বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র হয়ে উঠবে। তারা কী করে তার ওপর নির্ভর করেই নির্ধারণ হবে যে, কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।’
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা পশ্চিমাদের এই ধরনের আশঙ্কাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, মস্কো ইউক্রেনে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। তবে এরপরও পশ্চিমের কিছু লোকের জন্য এটি উদ্বেগের বিষয়।