ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঋণদান ও বিনিয়োগ স্থবির, চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি

সালেহ্ বিপ্লব, ঢাকা | প্রকাশের সময় : সোমবার ২১ অক্টোবর ২০২৪ ১১:০১:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। গত কয়েক মাস ধরে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

অনেক শিল্প ও ব্যাংক মালিক নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত না থাকায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমেছে। ফলে, বেসরকারি শিল্পগুলোতে কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা এবং ঋণের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে ধীর গতিতে চলছে। ইউএনবি

একনেক সভা শেষে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিল্প খাতে উৎপাদন ও ব্যাংকিং খাতে ঋণ কার্যক্রমে ধীরগতির কথা স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এ খাত বাধার সম্মুখীন হলে পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

তবে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিনিয়োগে বাধার সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন ড. মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম।’

 

উন্নয়ন বাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়িত সরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে ড. মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অনুমোদন পাওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন করছে।

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এতে ১,৩২১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার মধ্যে ১,১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি জরিপ প্রকল্প, ৮৭টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং ৮০টি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও কর্পোরেশনের প্রকল্প।

ড. মাহমুদ বলেন, অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হয় দুর্বলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে অথবা পরে পর্যালোচনার সময় দেখা গেছে, এগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়নি।

ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলমান প্রকল্পগুলো সংশোধন করছে, যা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। কোনো প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় বা কম অগ্রাধিকার সম্পন্ন মনে হলে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছালে সরকার পরবর্তী বরাদ্দ বন্ধ করে দিচ্ছে।

ড. মাহমুদ সতর্ক করে বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও সরকারি খাতের ব্যয় উভয়ই কমে গেলে অর্থনীতির সার্বিক অর্থপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি আরও বলেন, উভয় খাতের বিনিয়োগ হ্রাসের কারণে গ্রামীণ ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় মন্দার সম্মুখীন হচ্ছেন।

এডিপি বরাদ্দের ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০ খাতের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা (১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ) এবং শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা (১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ)।

অন্যান্য মূল খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে আবাসন ও সম্প্রদায় সুবিধা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার এবং পল্লী উন্নয়ন, কৃষি, পরিবেশ, শিল্প এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

শীর্ষ ১০টি খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ৯০ দশমিক ২৫ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল নীতি হার (রেপো রেট) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার গত আগস্টে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও এই সময়ে নিম্নমুখী ছিল।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি আগস্টে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ থেকে কমে সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি আগস্টে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ থেকে কমে সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।

শহর ও গ্রামীণ উভয় অঞ্চলেই মূল্যস্ফীতি গত মাসে হ্রাস পেয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশে, যা আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। শহরাঞ্চলে তা কমে সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে, যা আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ০১ শতাংশ।