সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর থেকে এ রোগটির বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সে সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য ঘুরছে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যার অনেকগুলোরই কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি।
পেঁপে পাতার রস
পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু নিরাময়ে কার্যকর বলে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করছেন। কিন্তু আসলেই কি পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে?
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, পেঁপে পাতার রস যে ডেঙ্গু নিরসনে ভূমিকা রাখে, এই দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
তবে তিনি একে একেবারে নাকচও করে দেননি।
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিরসনে পেঁপে পাতার রসের ভূমিকার পরীক্ষা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি যে এটি ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর।’
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পরীক্ষা হলেও বৈজ্ঞানিক নীতি অনুসরণ করে কোনো ধরনের 'র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল'-এর মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়নি বলে জানান মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, কোনো ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হলে র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল হতে হবে।
এছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে ঐ ওষুধটি কোন একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে পেঁপে পাতার রসের কার্যকারিতার বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
ভারতসহ পৃথিবীর কয়েকটি দেশে ডেঙ্গু রোগীকে পেঁপে পাতার রস খাওয়ানোর উপদেশ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এতে রক্তকণিকার পরিমাণ বেড়ে যায় বলেও মত ভারতীয় কয়েকজন গবেষকের।
২০১৭ সালে ভারতে ৪০০ জন ডেঙ্গু রোগীর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় উঠে আসে যে পেঁপে পাতার রস খাওয়া রোগীদের রক্তকণিকার পরিমাণ অন্য রোগীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি বেড়েছে এবং তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অপেক্ষাকৃত কম। খবরটি সে সময় 'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'তে প্রকাশিত হয়েছিল।
এছাড়া পেঁপে পাতার রস খাওয়ানো ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে রক্ত নেয়ার প্রয়োজনীতার হারও কম হিসেবে পরিলক্ষিত হয়।
ডেঙ্গুর তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীদের নির্দিষ্ট পরিমাণে পেঁপে পাতার রস খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েবসাইটেও।
মশার কামড় থেকে বাঁচতে নারিকেল তেল কতটা কার্যকর?
ডেঙ্গু প্রতিরোধ গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে আরেকটি বিষয় নিয়েও আলোচনা হচ্ছে - সেটি হলো পায়ে নারিকেল তেল মাখা।
অনেকে দাবি করছেন, নারিকেল তেল মশা তাড়ায় এবং তেল পায়ে মাখলে মশার কামড় থেকে বাঁচা সম্ভব। তবে এই দাবির সাথে পুরোপুরি একমত প্রকাশ করেননি শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ব বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা আখতার।
‘মশা যেহেতু চামড়া ভেদ করে রক্ত পান করে, তাই চামড়ার ওপর ঘন যেকোন ধরণের তেলই মশাকে কিছুটা প্রতিহত করতে পারে বলে আমি মনে করি,’ বলেন অধ্যাপক তাহমিনা আখতার।
এক্ষেত্রে নারিকেল তেলের সাথে কীটনাশক জাতীয় কোন দ্রব্য মিশিয়ে নিলে আরো বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন তিনি।
‘ন্যাপথলিন বা কর্পূরের গুড়া বেশ ভাল কীটনাশক। নারিকেল তেলের সাথে কর্পূরের গুড়া মিশালে মশা নিবারনে তা আরো বেশি কার্যকর হতে পারে।’ বলে মন্তব্য তাঁর।
তবে শুধু নারিকেল তেল নয়, কড়া গন্ধ থাকায় নারিকেল তেলের বদলে সরিষার তেলও মশা দূরে থাকতে কার্যকর হতে পারে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। সূত্র : বিবিসি বাংলা।