এক্স-রে, আল্ট্রাসাউন্ড, প্যাথলোজিক্যাল যন্ত্রপাতি সবই আছে কিন্তু বদ্ধরুমে বস্তায় মোড়ানো। দশ বছর আগে থেকে রয়েছে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার. কিন্তু কোনদিন অপারেশন হয়নি।
পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স সবই আছে তবে টেকনোলোজিস্ট ও অফিস কর্মচারীদের অধিকাংশ পদই খালি। ফলে জ্বর আর মাথা ব্যথার ওষুধ ছাড়া উপজেলাবাসী স্বাস্থ্য সেবার জন্য শহরমুখী হয় প্রতিদিনই। এভাবেই চলছে খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে মাত্র ২৫টি বেড নিয়ে যাত্রা শুরু করা তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখনও ৩১ শয্যায় সীমাবদ্ধ। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্রের চিত্র এটি। সবকিছু থাকতেও যেনো কিছুই নেই অবস্থা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক সূত্র জানায়, এখানকার এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন অচল থাকার পর মেরামত করা হয় ২০০৯ সালে। কিন্তু গত আট বছরেও মেশিনটি আর চালু করা যায়নি। বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকদের আমলে কেউ কোনদিন এক্সরে মেশিনের চেহারাও দেখেননি। শুধু শুনেছেন, ঐ রুমের মধ্যে একটি এক্স-রে মেশিন আছে, যা তালা দেয়া। আল্ট্রাসনো মেশিন আছে, তার প্রিন্টার নষ্ট ও অপারেটর নেই, তাই কখনও আল্ট্রাসনো হয় না। একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাব আছে, কিন্তু মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করার মত টেকনোলোজিস্ট না থাকায় কোনদিন কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। দশ বছর আগে কোটি টাকা খরচ করে একটি আধুনিক অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করা হয়েছিল হাসপাতালে, কিন্তু কোনদিন তা ব্যবহার হয়নি। সার্জন থাকলে এনেস্থেসিয়া চিকিৎসক থাকেন না আবার এনেস্থেসিয়া চিকিৎসক থাকলে সার্জন থাকেন না।
সিজারের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ সেবাও বন্ধ রয়েছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সিজার কার্যক্রমে অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি দীর্ঘকাল ধরে পড়ে থাকার কারনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতোদিন বলা হয় এনেস্থেসিয়া চিকিৎসক-এর সংকটের কথা। সম্প্রতি এনেস্থেসিয়া কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া হলে এখন বলা হচ্ছে সার্জন নেই। ফলে গর্ভবতী মায়েদেরকে মোটা অংকের টাকা খরচ করে স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকে বাধ্য হয়ে ভর্তি করা হচ্ছে। এতে করে সাধারন খেটে খাওয়া পরিবারের গর্ভবতী মহিলারা চরম বিপাকে পড়ছেন।
একাধিক রোগী বলছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাই বাইরে ক্লিনিকে অপারেশন করছেন কিন্তু এখানে (স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) অপারেশনে যত অজুহাত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপারেশন যোগ্য রোগী আসলে কৌশলে দালালের মাধ্যমে ভাগিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, গর্ভবতী মায়েদের অপারেশনের জন্য তেরখাদা হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও প্রায় দীর্ঘকাল ধরে হাসপাতালে সিজার কার্যক্রম বন্ধ আছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আবুল বাশার বলেন, এক্সরে মেশিন আছে শুনেছি কোনদিন চোখে দেখিনি। অন্যান্য সেবাও জনবলের অভাবে সম্ভব হচ্ছে না। জনবল সংকট পূরণ না হলে এসব সেবা চালু করা সম্ভব না।
সিজার বা অপারেশন বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, অপারেশন করার জন্য সার্জন-এর প্রয়োজন হয়, কিন্তু এখানে কোন সার্জন নেই।
খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মাদ বলেন, উপজেলাগুলোতে আধুনিক এ সব সেবা চালু করতে প্রয়োজন জনবল। এ পদগুলো শূন্য রয়েছে। এ কারণে রোগীদের আধুনিক সেবা দিতে পারছি না।