ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিএনপির ১০ দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:২৪:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছে বিএনপি। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ ১০ দফা দবি তুলে ধরেন।

দফাগুলো হচ্ছে— বর্তমান ‘অনির্বাচিত অবৈধ’ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগ; ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’ এর আলোকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা।

‘বর্তমান অবৈধ’ নির্বাচন কমিশন বাতিল, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা।

অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল করা।

খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার ও সব রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়া।

দেশে সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। সব দলের স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দল কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য নতুন কোনো মামলা এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতগুলোতে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।

গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংগঠিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করা। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে অতি দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা।

গত ১৫ বছরে গুমের শিকার নাগরিকদের উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা।

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ মুক্ত করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনু।

শনিবার বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগেই গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতোই ঢাকার গণসমাবেশেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সম্মানে দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে। সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, আমাদের সাত জন এমপি পদত্যাগ করেছেন। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের বলব আপনারাও পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে চলে আসুন।

অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোট হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পদত্যাগের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করবে।

তিনি বলেন, মাঠে যে লোক দেখেছেন তার বাইরে আরও ১০ গুণ মানুষ রাস্তায় রয়েছে। আমাদের এমপিরা তাদের সামনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে। আমি বলতে চাই, এটি ১০ নম্বর সমাবেশ না, ১০ নম্বর সতর্কতা সংকেত। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করা হবে।

সমাবেশে মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস অভিযোগ করেন, প্রতিদিন আওয়ামী লীগের ৫-১০ জন নেতাকর্মী দুই-চারশ পুলিশ নিয়ে তার শাহজানপুরের বাড়ির সামনে ঘোরে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের দুই-চারজন গুন্ডা আমাদের বাড়ির সামনে গিয়ে মিছিল করে, ‘মির্জা আব্বাসের চামড়া তুলে নেব আমরা, তারেক রহমানের চামড়া, তুলে নেব আমরা।’

তিনি বলেন, আমি বলতে চাই এত সাহস যদি থাকে, পুলিশ রেখে আসেন দেখাবে কে কার চামড়া তুলে নেয়। প্রতিটি ঘরে ঘরে মির্জা আব্বাস, জিয়াউর রহমান, তারেক রহমান রয়েছে।

এদিকে সমাবেশ ঘিরে গোটা রাজধানীতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা বিধানে শুধু পুলিশের পক্ষ থেকে ৩৪ হাজার জনবল মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

এতদিন বিএনপির সভা সমাবেশগুলোতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতেন। কিন্তু গেল বুধবারের বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।