দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ১ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর পর থেকে ইসির ব্যস্ততা বেড়েছে। কমিশন বলেছে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ হবে। গত ৯ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এ সময় ভোটের সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি তারিখ রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভা হবে এই সপ্তাহেই। সভায় ভোটের তারিখ নির্ধারণ হবে। কোনো কারণে ১৫ নভেম্বর তফসিল না হলে ১৬ নভেম্বর হতে পারে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। কমিশন ভোটের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। ব্যালট বাক্সসহ অধিকাংশ নির্বাচনী মালামাল ইতোমধ্যে আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন অফিসে পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হবে বলে আশা করা যায়। সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণা নিয়েও এবারে ভিন্ন চিন্তা রয়েছে ইসির। বিএনপিসহ সব দলের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে এবারেও তফসিল পরিবর্তনের চিন্তা রাখা হচ্ছে। এ জন্য ভোটের বেশ কয়েকটি তারিখ চিন্তায় রেখেছে কমিশন। এক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ তথা ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ রাখা হতে পারে। তবে এই তারিখ আবার পরিবর্তন হতে পারে। এদিকে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন ও নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে দেশব্যাপী শতর্ক অবস্থায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। থার্টিফার্স্ট ও নির্বাচন ঘিরে এইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। তাই সংসদ নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে এনে ১ জানুয়ারি রাখার আলোচনা চলছে। অন্যদিকে ভোট গ্রহণের তারিখ হিসেবে এখন জোর আলোচনায় রয়েছে ২-৩ জানুুয়ারি; ৭-৮ জানুয়ারি ও ৯-১১ জানুয়ারি। তবে সব কিছু নির্ভর করছে কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভার ওপর। কমিশন সভায় নতুন তারিখও নির্ধারণ হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, সিইসি বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন। এ জন্য বিটিভির মহাপরিচালকের সঙ্গে কথাও বলেছে ইসি। এ ছাড়া সিইসির ভাষণের খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। কমিশন সভায় অনুমোদন হলে তা চূড়ান্ত হবে। এদিকে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস উদ্বোধন করেছে ইসি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হলে নির্বাচনী ‘বিধি ভঙ্গের সংস্কৃতি ও অনাচার’ দুটোই কমে আসবে বলে আশা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে ‘অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ’ উদ্বোধন করে প্রার্থী ও ভোটারদের অনলাইন পদ্ধতি ও অ্যাপ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি। প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অনেক সময় সংঘাতের নানা ঘটনা ঘটে, এই অ্যাপ ব্যবহারের ফলে সেটি কমে আসবে বলে মনে করেন সিইসি। তিনি বলেন, মনোনয়ন সাবমিশন করতে গিয়ে অনেকে বাধাপ্রাপ্ত হন। সাবমিশন করার পর চাপ প্রয়োগ করা হয় নমিনেশন প্রত্যাহার করার জন্য। এই যে অনাচারগুলো হয়, অনলাইন সিস্টেমে অনাচারগুলো কমে আসতে পারে। অনলাইন সাবমিশনের ফলে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা আরও সহজ ও পরিশুদ্ধ হতে পারে।
অ্যাপ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিবন্ধিত দলের উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে হাবিবুল আউয়াল বলেন, অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) হলো সব প্রার্থীর জন্য। আর স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপটি সাধারণ মানুষের জন্য।
অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ‘চালু করা হলেও রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রচলিত পদ্ধতিতে সরাসরি মনোনয়নপত্র জমার ব্যবস্থাও রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, অতীতে দেখা গেছে, যখন মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রার্থীরা, তখন শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। এতে তাদের শক্তি প্রদর্শিত হতো। তারা প্রথম দিনেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলেন। অ্যাপের বৈশিষ্ট্য জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, “দুই ব্যাপার দেখা যাবে অ্যাপে। প্রার্থীদের আচরণবিধি ভঙ্গ করতে দেবে না। এ ছাড়া আমাদের সমাজে দেখা যায়, অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বাধা দেওয়া হয় বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বল প্রয়োগ করা হয়। এই অ্যাপের ফলে আর কেউ এ রকম সুযোগ পাবে না।” নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, এই অ্যাপের ফলে ভোট অনেক স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে এবং সাধারণ জনগণ এটাকে খুব ভালোভাবে নেবে। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, গত কমিশন অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। কিন্তু তা খুব একটা বাস্তবায়ন করা যায়নি। তা আজকে বাস্তবায়ন হলো, সেজন্য খুব ভালো লাগছে। মো. আনিছুর রহমান বলেন, আগে সশরীরে মনোনয়ন জমা দিতে এসে অনেক লোকসমাগম হতো এবং ‘অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার’ শিকার হতে হতো। এসব কারণেই একটা অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। নতুন অ্যাপ অধিকতর জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার টুল হিসেবে ব্যবহার হবে।