ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তিস্তা-গঙ্গা ইস্যুতে মোদী-মমতার দ্বন্দ্ব এড়াতে চায় বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৯ জুন ২০২৪ ০৬:১৬:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের পর তিস্তা-গঙ্গা ইস্যু নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন করে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে একটি চিঠিও দিয়েছেন। তবে পানিবণ্টন নিয়ে মোদী-মমতার দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে, এই ইস্যুকে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২ জুন দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিস্তা ও গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশে একটি কারিগরি টিম পাঠানো হবে।

 

এরপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনা না করেই  পানিবণ্টনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মমতার অভিযোগ নাকচ করে দেওয়া হয়।

 

মোদীর কাছে মমতা চিঠি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে লেখা চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, বৈঠকে গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া এ ধরনের একতরফা আলোচনা ও মতামত গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে তিস্তার পানির প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন করা সম্ভব নয়।

 

দীর্ঘ চিঠিতে তিনি আরও বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন এবং ফারাক্কা চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনাই রাজ্য সরকারের সম্পৃক্ততা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে করা উচিত নয়। পশ্চিমবঙ্গের জনগণের স্বার্থ সর্বাগ্রে, যার সঙ্গে কোনো মূল্যে আপস করা উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন মমতা।

 

মমতার অভিযোগ নাকচ

পানিবণ্টন ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করলেও তা নাকচ করা হয়েছে।

 

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সাওয়াল জানিয়েছেন,  পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার অভিযোগ সারবত্তাহীন। গঙ্গা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি ও আপত্তি নিয়ে মুখপাত্র বলেছেন,  ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালে নবায়ন করার কথা। এই লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গসহ সব অংশীদারকে রাখা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও নিয়মিতভাবে সেই কমিটির বৈঠকে অংশ নিচ্ছে।

 

রণধীর জয়সাওয়াল আরও বলেন, গত ৫ এপ্রিলও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। খাবার ও শিল্পের জন্য পানির বিষয়টি ২০২৬ সালের পরেও চুক্তিতে রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার চিঠি পাঠিয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদন পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে।

 

দ্বন্দ্ব এড়াতে চায় ঢাকা

পানিবণ্টন ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মমতা ববন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়ালেও বাংলাদেশ ইস্যুটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মোদীকে দেওয়া মমতার চিঠি ভারতের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে আমার কিছু বলার নেই। এটা সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ বিষয়ে ঢাকার নাক গলানোর কোনো দরকার নেই। কিছু বলারও দরকার নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো, মোদীর সঙ্গেও। অন্যান্য সব দলের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভালো।

 

পানিবণ্টন ইস্যুতে মমতার বিরোধিতা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিষয় তাদের অভ্যন্তরীণ। আমাদের সরকার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতা স্মারক করে বা চুক্তি করে। ঐকমত্য হয়, দ্বিমত হয়, সেটা তাদের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়।