ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দুদকের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৯:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

দিন দিন মামলার বোঝা বাড়ছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। যে হারে মামলার সংখ্যা বাড়ছে, সে হারে নিষ্পত্তির গতি বাড়ছে না। বছরের পর বছর মামলার কার্যক্রম ঝুলে আছে বিভিন্ন আদালতে। কোনও মামলার বয়স দুই দশক পার হয়েছে, কিন্তু নিষ্পত্তি হয়নি। তদুপরি দুর্নীতির অভিযোগে নিয়মিতই মামলা দায়ের করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের উদ্দেশ্য নিয়ে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর মাধ্যমে একই বছরের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ  ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিগত ১৯ বছরে বিভিন্ন সময়ে দায়ের হওয়া প্রায় সাড়ে তিন হাজার মামলা দেশের বিচারিক আদালত বা অধস্তন আদালতগুলো ছাড়াও উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে বিচারের অপেক্ষায়। মাঝে মাঝে এসব মামলার শুনানি হয়, সাক্ষ্যগ্রহণ হয়, কিন্তু  চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় না। দুদক বলছে, মামলার নিয়মিত তদারকি তারা করছে। এসব মামলার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগও আছে। তারাও কাজ করছে। কিন্তু মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে।  

 

 

দুর্নীতি দমন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুর্নীতির অভিযোগে অধস্তন আদালতে বর্তমানে তিন হাজার ৩৩২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৮৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম বর্তমানে চলমান আছে। উচ্চ আদালতের আদেশে ৪৩৫টি মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। উচ্চ আদালতে ৬৮৯টি রিট, ৮৭৬টি ফৌজদারি বিবিধ মামলা, এক হাজার ১৫২টি আপিল মামলা ও ৬১০টি ফৌজদারি রিভিশন মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এছাড়া উচ্চ আদালত ৩৯টি মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে। ১৯ বছর আগে ২০০৪ সালে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সময়ে দায়ের হওয়া ৩৭০টি মামলার নিষ্পত্তিও হয়নি এখনও। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে ১৭৯টি মামলার কার্যক্রম। তবে গত এক বছরে ব্যুরো আমলের মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৪৭টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত  মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে মোট ২৪১টি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে ৪৭৯টি মামলা।   

 

 

দুদক ও আদালত সূত্রে জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, আয়কর ফাঁকি ও সম্পদের তথ্যে গরমিল, ঘুষগ্রহণ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব মামলা করেছে। মামলা দায়েরের পর বিবাদী পক্ষ আইনি প্রতিকার পেতে বিচারিক আদালতসহ উচ্চ আদালতে যান। উচ্চ আদালত থেকে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশও নিয়ে আসেন অনেকে। ব্যক্তির সম্পদের হিসাব বিবরণী চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উচ্চ আদালতে দুদকের নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটও করেন। তখন সেই রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুদক তার কার্যক্রম চালাতে পারে না। যে কারণে দুদকের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারিক আদালতে দুদকের মামলার পরিসংখ্যানে হাইকোর্ট বিভাগে নিষ্পত্তির হার দেখানো হয়েছে ১১ দশমিক ৪৩ ভাগ। কমিশনের পক্ষে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৬ দশমিক ৮১ ভাগ মামলার। আপিল বিভাগে ১৪ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

 

 

এ বিষয়ে দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল  বলেন, ‘মামলা যখন হয়ে যায়, তখন সে মামলা আদালতের এখতিয়ারে চলে যায়। সেখানে দুদকের কিছু করার থাকে না। আদালত সেই মামলা নিষ্পত্তি করে নিজস্ব পদ্ধতিতে।  মামলা নিষ্পত্তি করতে হলে সাক্ষ্যগ্রহণ করতে হয়। সেখানে সাক্ষীকে আসতে হবে। সাক্ষী যদি না আসে তাহলে মামলা বিলম্বিত হয়। সেক্ষেত্রে আদালত ব্যবস্থা নেবে। তবে মামলা নিষ্পত্তির সময় দীর্ঘায়িত হলে বাদী-বিবাদী সবাইকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।’

 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মামলা হয়ে গেলে সেটা আদালতের এখতিয়ারে চলে যায়। তারপরও মামলা দ্রুত  নিষ্পত্তির বিষয়টি বিজ্ঞ আদালতের নজরে আনা হবে। দুদক আন্তরিকভাবেই চেষ্টা করছে যথাসময়ে সাক্ষ্য ও তথ্য-উপাত্ত আদালতে উপস্থাপনের জন্য। এছাড়া মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার ক্ষেত্রে আদালতে সাক্ষী না যাওয়াসহ কিছু বিষয় ও কারণ তো আছেই।’