ঢাকা, বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩শে মাঘ ১৪৩১

নওগাঁয় আম চাষের বাম্পার ফলনের আশা

সুবীর দাস, নওগাঁ | প্রকাশের সময় : বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ০২:০৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁয় গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমের মুকুল সবচেয়ে বেশি এসেছে। মুকুলের ম-ম ঘ্রাণ এখন নওগাঁর বাতাসে। কয়েক দিনের কুয়াশা ছাড়া আবহাওয়া আমের অনুকূলে। আমের মুকুলের আধিক্য দেখে বাম্পার ফলনের আশা করছেন আমাচাষিরা।

কৃষিবিদরা বলছেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে রয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। এবার গত বছরের চেয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার ২৫ হাজার মেট্রিক টন ফলন বাড়তে পারে। 

আমচাষিরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। সে হিসেবে গত বছর নওগাঁয় আমের ফলন কম হওয়ায় এবার তাঁরা আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধে আছেন। বাগানে প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছি। ঘন কুয়াশা থাকলেও শীতের তীব্রতা কম হওয়ায় মুকুলের তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তারপরেও কুয়াশার কারণে মুকুলকে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তাঁরা। ক্ষেত্র বিশেষে ছিটানো হচ্ছে পানি। আমগাছের  গোড়াতেও পানি দিচ্ছেন চাষিরা।

এদিকে বাগানে মুকুল আসা শুরু করতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছে। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন। তবে এখনো বাগান কেনাবেচা জমে উঠেনি। মুকুলে গুটি হওয়ার পর বাগান কেনাবেচা জমে উঠবে।  

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার নওগাঁ জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এই পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। 

নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। এই দুই উপজেলাতেই প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বাগানে এবার আম চাষ হয়েছে। গত শনিবার ও রোববার সাপাহার ও পোরশা উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগানগুলোতে অধিকাংশ গাছেই ব্যাপক মুকুল এসেছে। মুকুলে আম গাছের পাতা ঢেকে গেছে।  কোনো কোনো বাগানে শতভাগ গাছে মুকুল এসেছে। আবার কোনো কোনো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে।

পোরশা উপজেলার বড়গ্রাম এলাকার আমাচাষি রায়হান আলম বলেন, গত বছর শীতের কারণে অনেক লেটে মুকুল এসেছিল। গাছে মুকুল আসতে প্রায় ১৫-২০ দিন লেট হয়েছিল। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়েও অনেক গাছে মুকুল ধরেছিল। তবে সে তুলনায় এবার অনেক আগেই মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। 

সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকাসহ ২০০ বিঘা জমির ওপর তিনটি আমবাগান রয়েছে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার। তিনি স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি ছাড়াও বিদেশেও আম রপ্তানি করে থাকেন। 

সোহেল রানা বলেন, গত বছর তাঁর বাগানে ৫০-৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এবার এখন পর্যন্ত তাঁর বাগানে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। ফাল্গুন মাস আমের মুকুল আসার উপযুক্ত সময়। আশা করছেন, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে বাকি গাছগুলোতেও মুকুল আসবে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত আমের জন্য অনুকূলে আছে। রোদের তাপ কম পেলে ও প্রকৃতি কুয়াশায় ঢেকে থাকলে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য গাছে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তিনি। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাধারণত ধরা হয় দীর্ঘস্থায়ীভাবে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে আমের মুকুল ধরতে চায় না। তবে এবার জানুয়ারি মাসে দুই-এক দিন করে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। গড় তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। এই তাপমাত্রা আমের জন্য অনুকূল। তবে কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে কুয়াশা থাকছে। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কুয়াশার কারণে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য আমরা আমচাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।’  

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ